চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

ইউসুফ বিন তাশফিন

    ইউসুফ বিন তাশফিন (নসীম হিজাযী) বাপকা বেটা : এক বাচ্চা ছেলে দশাসই এক লোকের হাত ধরে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে । আগে আগে যাচ্ছে দুই কিশোর । লোকটি ডেকে বলল, 'সাদ, আহমদ, দাঁড়াও'। সাদ ও আহমদ বাগানের ভাঙা দেয়ালটার কাছে পৌছে ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো । লোকটার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি । সে তার বিশাল দেহটা নিয়ে ওদের কাছে এসে বলল, 'হাসান খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে' । আলমাস চাচা, আমরা আজ মদিনাতুজ জোহরা দেখে যাব ।কি হাসান! তুমি কি খুব কাহিল হয়ে পড়েছো ? 'বললো বড় ছেলেটি । হাসান কোন জবাব না দিয়ে মুখ কালো করে এক পাথরের ওপর বসে পড়লো । তীর ধনুক নামিয়ে রাখল মাটিতে... (প্রথম চাপ্টার) খন্ড-বিখন্ড স্পেন : হিজরী পঞ্চম শতাব্দীতে স্পেনের মুসলমানরা ইতিহাসের এক শোচণীয়পর্যায় অতিক্রম করছিলো । উমাইয়া শাসনের জৌলুস তখন বেশ ভাটা পড়েছে । যে বিশাল সাম্রাজ্যেরশক্তি ও দাপট পাশ্চাত্যের সম্রাটদেরকে সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে রাখতো আত্মকলহের কারনে সে সাম্রাজ্য খন্ড বিখন্ড হয়ে গিয়েছিলো .. (দ্বিতীয় চাপ্টার) কর্ডোভা, টলেডো ও সেভিল : সেভিলের বাদশাহ মুতামিদ ও টলেডোর বাদশাহ মামুন জান্নুন অন্যান্য খন্ড-রাজাদের চেয়ে শক্তিশালী ছিলো । তারা উভয়েই নিজেদেরকে স্পেনের সম্রাটতুল্য ভাবত এবং মনে করত কর্ডোভা দখল করার করার অধিকার একমাত্র তারই আছে । এর ফলে , মুসলিম শাসিত কর্ডোভার একপাশে মুতামিদ ও অন্য পাশে মামুন জান্নুন সৈন্য সমাবেশ করল । অবরোধ করার পর প্রথম যে প্রশ্নটি..(তৃতীয় চাপ্টার)  পরিস্থিতির আরো অবনতি : আলমাস প্রতিবারই গ্রানাডা এসে ফসল ও বাগ-বাগিচার সমুদয় আয় সকিনার কাছে দিয়ে হিসাবপত্র দেখার জন্য পীড়াপীড়ি করতো । সকিনা বলতো, ‘না আলমাস! ওটা তুমিই দেখো, আমার দেখার কোন প্রয়োজন নেই ।’ আলমাস রেগে গিয়ে সাদ কে বলতো, ‘দেখো সাদ! তুমি এখন বেশ বড় হয়েছো । এখন তেকে তোমারই উচিত হিসাবপত্র যাচাই করে দেখা।’...(চতুর্থ চাপ্টার) মুজাহিদ বাহিনী : গ্রানাডা ফিরে আসার কয়েক দিন পরেই সাদ বিন আব্দুল মুনীম সর্বোচ্চ ফৌজি তালিম শেষ করে সনদ নিয়ে বেরিয়ে এলো । এ সনদপ্রাপ্তরা সাধারণত সামরিক বাহিনীতেই যোগদান করতো। কিন্তু সাদ ‘নাম কা ওয়াস্তে ’ সৈণ্য বাহিনীতে যোগদান করায় আগ্রহী হলোনা ..(পঞ্চম চাপ্টার)
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
নসীম হিজাযী
শরীফ হুসাইন(উর্দু: شریف حسین,ছদ্মনাম নসিম হিজাযী (উর্দু: نسیم حجازی হিসাবে বেশি পরিচিতি, জন্ম:১৯১৪ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৯৯৬) হলেন একজন পাকিস্তানি উপন্যাসিক ও লেখক, যিনি লেখালেখির সময় নসিম হিজাযী ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। তিনি একজন উর্দু ভাষার লেখক। হিজাজী পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার ধারওয়াল শহরের পাশের একটি গ্রাম সুজানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই ১৯৪৭ সালে তার পরিবার লাহোরে বসবাস শুরু করে। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন এবং ১৯৯৬ সালের ২ মার্চ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।


প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাদীক্ষা
নসিম হিজাজী ১৯৩২ সালে ধারওয়াল মিশন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৩৮ সালে লাহোর রেলওয়ে রোড ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিআই পাশ করেন। পড়াশোনা শেষে সাংবাদিকরা জগতে পা রাখেন। ১৯৪১ সালে করাচীর দুটি পত্রিকা ‘হায়াত’ এবং ‘জমানা’ এর সাথে যুক্ত ছিলেন। বেলুচিস্তান ও সিন্ধু অঞ্চলে পাকিস্তান আন্দোলনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তিনি মীর জাফর আলী খান জামালীর সাপ্তাহিক তানজিম এর সম্পাদকের দ্বায়িত্বও পালন করেন। তিনি ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত এই পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকেন। এরপর ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডির দৈনিক তামির এর সম্পাদক পদে নিযুক্ত থাকেন। সে পত্রিকাটিকে নসিম হিজাজী অনন্য উচ্চতায় পৌছে দেন। ১৯৫৩ সালে নসিম হিজাজী ও চৌধুরী এনায়েতুল্লাহ মিলে দৈনিক কোহিস্তান প্রকাশ করেন। যার বেশীরভাগ গুরুত্বপূর্ণ কাজই নসিম হিজাজী পালন করেন। এই পত্রিকা গ্রহণযোগ্যতা ও সফলতার মনজিলে খুব দ্রুত পৌছে যায়। এটা লাহোর এবং মুলতান থেকেও প্রকাশ হওয়া শুরু করে। দেখতে দেখতে পাঞ্জাব থেকেও প্রকাশ হওয়া শুরু করে এবং সব পত্রিকার উপরে চলে যায়। ১৯৬৩ সালে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার এর তিনটি এডিশনের উপরেই দুই মাসের জন্য সেন্সরশীপ আরোপ করে। অজুহাত হিসেবে পত্রিকার একটি খবরকে বানায় যে, লাহোরে এহতেজাজি জলসায় পুলিশের গুলিতে তিনজন ছাত্র নিহত হয়েছে। কিন্তু সরকারের ভাষ্য হচ্ছে কেউ নিহত হয় নাই বা আহতও হয়নাই। নসিম হিজাজীকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনাটা পত্রিকার জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। এর পর এটি আর আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। তাছাড়া ১৯৬৩ সালে চৌধুরী এনায়েতুল্লাহ এই পত্রিকা থেকে আলাদা হয়ে যান। যাইহোক ১৯৭১ সালে দৈনিক কোহিস্তান প্রকাশিত হওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নসিম হিজাজী তার মূল কাজ ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। এছাড়াও রাওয়ালপিণ্ডি থেকে প্রকাশিত দৈনিক জঙ্গ পত্রিকায় মাঝেমাঝে ঐতিহাসিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ লিখতেন।

উপন্যাসসমূহ
 তিনি তার অধিকাংশ কাজের ভিত্তি হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইসলামী ইতিহাসকে। ইসলামের ইতিহাস নিয়ে তার এই কাজের মধ্যে তিনি ইসলামী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন দুটোই দেখিয়েছেন। তার উপন্যাস মোহাম্মদ বিন কাসিম, আখেরি মা’রেকা, কায়সার ওয়া কিসরা ও কাফেলায়ে হেজাজ এর মধ্যে ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাদিক্ষায় উন্নতির যুগ বর্ণনা করেন। আবার ইউসুফ বিন তাশফিন, শাহিন, কালিসা আওর আগ এবং আন্ধেরি রাত কি মুসাফির এই বইগুলোতে স্প্যানিশদের পুনরায় বিজয়ের বর্ণনা দিয়েছেন। এগুলোর একটার(কালিসা আওর আগ) এর মধ্যে তিনি বেদনাময় তথাপি সত্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কুখ্যাত স্পানিশ ইনকুইজিশন এর ব্যাপারটা। যা শুরু হয়েছিল স্পানিশ ইহুদিদেরকে লক্ষ্য করে এবং শেষ হয়েছিল স্প্যানিশ মুসলমানদেরকে নির্বাসন বা জোরপূর্বক বাহ্যিকভাবে খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার মাধ্যমে। আখেরি চটান উপন্যাসে বর্ণনা করেছেন মধ্য এশিয়ায় চেঙ্গিস খানের বিজয় ও খারেজম সাম্রাজ্যের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। এই বইতে দেখিয়েছেন মোঙ্গলদের নৃশংস বিজয় এবং চেঙ্গিস খানের সামরিক প্রতিভা। সুলতান জালালুদ্দিন খারেজম শাহের দৃঢ়তা এবং বাগদাদের আব্বাসি খলিফার দুর্দশা। তিনি ব্রিটিশদের ভারত জয়ের উপর দুটো ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছেন। সেখানে বর্ণনা করেছেন মোঘল সাম্রাজ্য অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় জাতির পতন সম্পর্কে। মোয়াজ্জম আলী বইটা শুরু হয়েছে পলাশীর যুদ্ধের কিছুদিন পূর্বের কাহিনী দিয়ে। মূল চরিত্র মোয়াজ্জম আলী যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। উপন্যাস মূল চরিত্রকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যেতে থাকে। সে হারানো গৌরব ও স্বাধীনতা ফিরে পেতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে যায়। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সর্বশেষ সে সেরিঙ্গাপটমে বসতি স্থাপন করে যা উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছিল হায়দার আলীর উচ্চ ব্যক্তিত্ত দ্বারা। এই বইটি শেষ হয়েছে মোয়াজ্জম আলীর মৃত্যু দ্বারা। দ্বিতীয় বই “আওর তলওয়ার টুট গাই” এর মধ্যে হায়দার আলীর ছেলে টিপু সুলতান সম্পর্কে বিস্তারিত আছে। এছাড়াও তিনি পাকিস্তানের স্বাধীনতা সম্পর্কে খাক আওর খুন নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধীকার 
জীবনের শেষ দিকে নসীম হিজাজী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. আব্দুল কাদির খানের উৎসাহে সিয়াচেন যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের বীরত্বের উপর একটি উপন্যাস লেখছিলেন। তার আগেই কঠিন রোগ তাকে পেয়ে বসে। ২ মার্চ ১৯৯৬ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইসলামাবাদ কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পুরস্কার
১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার কতৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার প্রদান করেন সাহিত্য এ উলেখ্যযোগ্য অবদান এর জন্য।

এই লেখকের আরো বই