চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

    "অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপট" বইটির 'অক্টোবর বিপ্লবের প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা' অংশ থেকে নেয়াঃ আগামী বৎসর অক্টোবর বিপ্লবের শততম বর্ষ পূর্ণ হবে। এই বিপ্লব কি এখনও আমাদের জন্য কোনাে তাৎপর্য বহন করে? অক্টোবর বিপ্লব যে সমাজতান্ত্রিক দেশের জন্ম দিয়েছিল, তা তাে শেষ পর্যন্ত টেকে নি। খােদ রাশিয়াতেই রাষ্ট্রীয়ভাবে অক্টোবর বিপ্লবকে স্বীকৃতি দেয়া হয় না (যদিও এখনও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মস্কো-লেনিনগ্রাদে ও অন্যান্য শহরে ৭ নভেম্বর বিপ্লব দিবস উদযাপন করে, লেনিন-স্টালিনের ছবি হাতে নিয়ে)। তারপরও কি অক্টোবর বিপ্লবের বিশেষ কোনাে তাৎপর্য থাকতে পারে? আমরা বলি, হ্যাঁ, অক্টোবর বিপ্লব এখনও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু রাশিয়ার জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই। অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য আন্তর্জাতিক। অন্যদিকে বুর্জোয়া পণ্ডিতরা বলছেন, ওটা নাকি একটি মিথ্যা স্বপ্ন ছিল। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, একদিন দু’দিন নয়, দুই এক বৎসর নয়, এতগুলি বৎসর, সত্তর বছর, টিকেছিল কিভাবে? সমাজতন্ত্রের অবিশ্বাস্য রকমের বিপুল শক্তি তাে আমরা দেখেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অতিপরাক্রমশালী নাৎসী জার্মানী তৎকালীন পৃথিবীর দুই নম্বরের সাম্রাজ্যবাদী দেশ ফ্রান্সকে দখল করে নিল কত সহজে, কিন্তু তারা কেন ও কিভাবে সমাজতান্ত্রিক সােভিয়েতের লাল ফৌজের কাছে পরাজিত হল? সমাজতান্ত্রিক নীতির কারণেই তাে সােভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের মহামন্দার সময়েও (১৯২৯-১৯৩৪) অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজতন্ত্রকে যারা প্রতিনিয়ত গালি দেন, সেই বুর্জোয়া পণ্ডিতরা এই সকল প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন না। কুৎসারটনাকারীগণ আরও বলেন, অক্টোবর বিপ্লব নাকি আসলে কোনাে বিপ্লবই ছিল না। ওটা নাকি একটা দুর্ঘটনা মাত্র। ওটি ছিল বিশেষ অবস্থার সুযােগে লেনিন ও বলশেভিকদের এক চরম হঠকারী কাজ। কিন্তু আবারও প্রশ্ন, হঠকারী কাজ কি কখনও এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে? সন্দেহ নাই যে, গত শতাব্দীর শুরুর দিকে অক্টোবর বিপ্লব যেমন ছিল মানব জাতির ইতিহাসে এক বিশাল অগ্রগতি, তেমনি গত শতাব্দীর শেষ দশকে সােভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় ছিল এক বড় ধরনের পশ্চাদপসরণ। অক্টোবর বিপ্লবের নেতা লেনিনও বলেছিলেন, “মাঝে মাঝে বিশ্ব ইতিহাস বিরাট লাফ দিয়ে বিপরীত দিকে চলে যায়। এটা না মানা এবং বিশ্ব ইতিহাস সরল গতিতে কেবল সামনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এইভাবে মনে করা হবে অবৈজ্ঞানিক, অদ্বাত্মক তত্ত্বগতভাবে ভুল।” (লেনিন রচনা সংকলন, ইংরেজী, মস্কো, খণ্ড ২২, পৃ ৩১০) অবশ্য সামগ্রিকভাবে বিশ্ব ইতিহাসের গতিমুখ এখনও সমাজতন্ত্রের দিকেই। অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। আমরা এখন সেই যুগেই বাস করছি যাকে বলা যায় সমাজতন্ত্রের অভ্যুদয়ের যুগ, যে যুগের সূচনা হয়েছিল একশাে বছর আগে অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। তবে ইতিহাসের এই চলার পথে বাকমােড়, এমনকি সাময়িক পশ্চাদপসরণও হতে পারে। আজকের ইতিহাসের কালপর্বকে, এই পর্বের বৈশিষ্ট্যসমূহকে বিশ্লেষণ করে আমাদের কর্মধারা নির্ধারণ করা দরকার। কিন্তু এর সঙ্গে অক্টোবর বিপ্লবের সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে বৈকি। প্রথমত অক্টোবর বিপ্লব কেবল রাশিয়ার ঘটনা ছিল না, তার ছিল আন্তর্জাতিক তাৎপর্য। দ্বিতীয়ত, অক্টোবর বিপ্লব বহু বছর আগের ঘটনা হলেও সেই বিপ্লবের অনেক শিক্ষা এখনও প্রাসঙ্গিক। এই নিবন্ধে আমরা সেই আলােচনায় প্রবেশ করবাে।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
হায়দার আকবর খান রনো:
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা। নড়াইল জেলায় এক রাজনৈতিক পরিবারের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জন্ম হয়েছিল বলে তার ডাকনাম রাখা হয়েছিল রনো। ১৯৪২ সালের ৩১শে আগস্ট কলকাতায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নানা ছিলেন উপ-মহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিক সৈয়দ নওশের আলী। পিতৃভূমি নড়াইল চিত্রা নদীর পাড়ে বরশালা গ্রামে। পিতা হাতেম আলী খান ছিলেন একজন প্রকৌশলী।

হায়দার আকবর খান রনো যশোর জিলা স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও ঢাকার সেন্টগ্রেগরী স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকাস্থ সেন্টগ্রেগরী স্কুল ম্যাট্রিক পাস করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে তিনি মেধা তালিকায় ১২তম স্থান লাভ করেছিলেন। ১৯৬০ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি কারাবাস ও অন্যান্য কারণে। পরে তিনি কারাগারে অবস্থানকালে আইনশাস্ত্রে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয় তার তাঁর সক্রিয় রাজনীতি। এ সময় তিনি পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য।

এই লেখকের আরো বই