চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌

    ছোট পরিসরে জীবনীগ্রন্থ পড়তে খুব ভালো লাগে। এরকমই একটি বই ‘জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্’। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার বইটির লেখিকা সম্পর্কে ডঃ শহীদুল্লাহর পৌত্রী। কাজেই ডঃ শহীদুল্লাহ সম্পর্কে জানতে এরচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই পাওয়া যাবে না। বইটিতে এই জ্ঞানতাপসের জন্ম, শৈশব, লেখাপড়া, কর্মজীবন, সাহিত্যকর্ম ও মৃত্যুকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই চব্বিশ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মুহম্মদ ইবরাহীম। এ নামে আকিকাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মায়ের আপত্তিতে পরবর্তীতে তাঁর নাম রাখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। স্কুল জীবন থেকেই ভাষা শেখার নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। সে সময় ছাত্রদের বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি ফারসি বা সংস্কৃত পড়তে হতো। সাধারণত মুসলমান ছাত্ররা ফারসি, আর হিন্দু ছাত্ররা সংস্কৃত পড়তো। কিন্তু শহীদুল্লাহ্ সংস্কৃত নিয়ে পড়া শুরু করেন এবং নিয়মিত এ বিষয়ে প্রথম হতেন। তার হিন্দু বন্ধুরা কৌতুক করে পন্ডিত মশাইকে বলতো, “স্যার, আমরা বামুন কায়েতের ছেলে থাকতে, আপনি ঐ মুসলমান ছেলেটাকে সবসময় ফাস্ট করে দেন, এতো ভারি অন্যায়।” উত্তরে পণ্ডিত মশাই বলতেন, “আমি কী করবো, সিরাজুদ্দৌলা (তিনি শহীদুল্লাহর না কিছুতেই মনে রাখতে পারতেন না, বলতেন সিরাজুদ্দৌলা) লেখে ভালো। তোরা তো ওর মতো লিখতে পারিস না।” সংস্কৃত ছিলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রিয় বিষয়। এ বিষয়ে তিনি বি.এ পাশ করেন। কিন্তু একই বিষয়ে এম.এ পড়ার সময় এক গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিতের কারণে তিনি পড়া শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে ‘তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে’ এম.এ পাশ করেন তিনি। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কর্মজীবন শুরু করেন সীতাকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক হিসেবে। বছরখানেক পর সেখান থেকে জন্মস্থান বশিরহাটে ফিরে এসে আইনজীবী হিসেবে ওকালতি শুরু করেন। কিন্তু ওকালতিতে কখনোই তাঁর মন বসেনি। ১৯১৯ সালে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান। এখানে চাকরি করার সময়ে তিনি ‘আঙুর’ নামক একটি শিশুতোষ পত্রিকা বের করেন। বিখ্যাত এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলসহ নামিদামি সাহিত্যিকেরা লিখতেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কারণে তিনি শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতীর শিক্ষক হবার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। জ্ঞানার্জন করাই ছিলো তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। এজন্য তাঁকে ‘জ্ঞানতাপস’ বলা হয়। অবশ্য ছাত্র ও সহকর্মীরা তাঁকে ‘চলিষ্ণু শব্দ কম্প ধ্রুম’ বা চলন্ত অভিধান নামে ডাকতেন। যে কোনো শব্দের অর্থ বা উৎপত্তি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক উত্তর দেয়ার ক্ষমতার কারণে তাঁকে এ নামে ডাকা হত। এছাড়াও বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শহীদুল্লাহ্। চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। এ গবেষণার ফলে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডিলিট ডিগ্রী পান। এছাড়া বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম ডিপ্লোমা অর্জন করেন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। সেই ১৯২০ সালে তিনি ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে উত্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়া শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার। শহীদুল্লাহ এর প্রতিবাদ করলেন। একাধিক জায়গায় তিনি বাংলা ভাষার সপক্ষে যুক্তি দিলেন। ১৯৪৮ সালে এ বিষয়ে তিনি ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ শীর্ষক একটি বই লিখে ছাত্র-শিক্ষকসহ দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে বিনামূল্যে বিতরণ করলেন৷ সশরীরে মিটিং মিছিলেও অংশগ্রহণ করেন৷ এসব কারণে তিনি সরকারের চক্ষুশূল হলেন। তারপরেও তিনি আপোষ করেননি। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পীরের বংশধর ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। কিন্তু ধর্মান্ধতা তাঁকে কখনো ছুঁতে পারেনি৷ এজন্যই তিনি বলেছেন, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটা কোন আদর্শের কথা নয়, এটা একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপা মেরে দিয়েছেন যে মালা তিলক টিকিতে কিংবা টুপি লুঙ্গি দাঁড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।” ধর্ম নিরপেক্ষ স্বাধীন বাঙালি রাষ্ট্রই ছিল তাঁর ঐকান্তিক কামনা। ১৯৬৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাগাতগ্রস্থ হলেন ড. শহীদুল্লাহ্। এর প্রায় দেড় বছর পর ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান এই জ্ঞানতাপস। সহজ-সরল জীবন আর জ্ঞানের সাধনা ছিলো তাঁর সারা জীবনের দর্শন। -রায়হান আতাহার
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
শান্তা মারিয়া:
কবি ও সাংবাদিক। ১৯৭০ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকায় জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ১৯৯৭ সালে দৈনিক মুক্তকণ্ঠে সাংবাদিকতা শুরু। এরপর জনকণ্ঠ, আমাদের সময়, রেডিও আমার ও চীন আন্তর্জাতিক বেতারে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। সিএমজি বাংলাদেশ ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শান্তা মারিয়া। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা করছেন প্রায় ২৪ বছর। তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি এবং চর্যাপদ নিয়ে মূল গবেষক, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাতনি এবং ভাষাসৈনিক মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহর মেয়ে। এর বাইরে শান্তা মারিয়ার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি চীনের ইউন নান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। এর আগে তিনি চীনে চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে বাংলা বিভাগে সাংবাদিকতা করেছেন। 
প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এ পর্যন্ত ৪টি কাব্যগ্রন্থসহ ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।

এই লেখকের আরো বই