চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

মাই লাইফ ইন দ্য মাফিয়া

    ভূমিকা: ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সে ভিনসেন্ট চার্লস টেরেসার সাথে এক মোটেলে সাক্ষাৎ হয় লেখক-সাংবাদিক টমাস সি রেনারের। মোটেলের অবস্থান, এমনকি শহরের নাম শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল রেনারের কাছে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ইউ. এস মার্শালরা পেরেসার কাছে নিয়ে যান লেখককে। টেরেসার সাথে কথোপককথনের সময় সশস্ত্র ছ’জন মার্শাল সার্বক্ষণিক প্রহরায় নিযুক্ত ছিলেন এই মাফিয়া কিং-এর । কারণ সরকারের রাজসাক্ষী টেরেসার জীবন ছিল দারুণ বিপদাপন্ন। মাফিয়াদের ইতিহাসে টেরেসার মতো অত্যন্ত উঁচু পদের দস্যুরাজ ওই প্রথম সরকারের কাছে নিজের দলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। আমেরিকান মাফিয়ারা তখন পাঁচ লাখ ডলার ঘোষণা করে ভিনেসেন্ট টেরেসার মাথার দাম্ যে তাকে খুন করতে পারেবে সেই পেয়ে যাবে বিপুল অঙ্কের টাকাটা। ভিনসেন্ট টেরেসা সাধারণ কোনো গুগুা সর্দার নয় ।সে ছিল টপ মাফিয়া চিফ। নিষ্ঠুর স্বাভাবের। এই লোকটি মাফিয়াদের হয়ে টানা আটাশ বছর কাজ করেছে, সংঘটিত করেছে অনেক লোমহর্ষক অপরাধ্ তার দলের দু’মুখো সদস্যরাই তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। যদি ধরা না পড়ত টেরেসা, বলা হয়, মাফিয়ার আকাশে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সফল একজন অপরাধী হিসেবে আজীবন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হয়ে জ্বলজ্বল করত সে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার তিন বছরের মাথায় ভিনসেন্ট চার্লস টেরেসা হয়ে ওঠে আমেরিকান সরকারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইনফর্মার। তার সহযোগিতায় ইউ. এস গভর্নমেন্ট কমপক্ষে পঞ্চাশজন শক্তিশালী অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। টেরেসা অকপটে জানিয়েছে কত সহজে টাকা দিযে পুলিশ এবং আদালতকে কিনে ফেলে মাফিয়ারা। টাকা দিয়ে রাজনীতিবিদ এবং বিচারকদেরও কেনা সম্ভব। ভিনসেন্ট চার্লস টেরেসা মাফিয়াদের সম্পর্কে যেসব গোপন তথ্য প্রকাশ করেছ তা কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নয় আসলে দলের লোক তার বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং নিজের সন্তানদের ভীতি প্রদর্শন করলে মাফিয়াদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে টেরেসা। যদিও মাফিয়াদের সংগঠনে কঠোরভাবে নিষেধ আছে কোনো অবস্থাতেই দলের গোপন তথ্য ফাঁস করা যাবে না। কিন্তু টেরেসা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, গ্রাহ্র করেনি সেই নিষেধ। তবে তার একুশ বছরের সাজা মওকুফ করে পাঁচ বছর মেয়াদি সাজায় তা পরিণত করা হয়েছে বলে যে মুখ খুলেছে টেরেসা, তাও নয় । মূল কারণ হলো-তার পরিবারের একান্ত অনুরোধ মাফিয়াদের সমস্ত গোপন খবর ফাঁস করে দিয়েছে টেরেসা । নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া বিদ্যে পেটে নিয়ে ভিনসেন্ট টেরেসা নিজের প্রচেষ্টায় মাফিয়ার টপ লিডারে পরিণত হয়। অসম্ভব প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা টেরেসা তার দুর্দান্ত প্রতিভা কাজে লাগিয়ে সব সময়ই নতুন নতুন সাফল্য অর্জন করেছে। জীবনে সব ধরনের অপরাধের কথাই সে স্বীকার করেছে শুধু নরহত্যা ছাড়া টেরেসা দাবি করে সে মাফিয়ার মেড মেম্বর বা ‘তৈরি’ সদস্য নয় ।‘তৈরি’ সদস্য পদ পেতে হলে অন্তত একজন মানুষ হত্যার কৃতিত্ব অর্জন করতেই হয় মাফিয়াদের । নিউ ইংল্যান্ডের সেরা গ্যাংস্টার ভিনসেন্ট টেরেসা জীবনে কত টাকা কামিয়েছে সে হিসেব তার নিজেরও জানা নেই। কিন্তু পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পরে তার বিলাসবহুল সেই জীবন পদ্ধতি একেবারেই পাল্টে গেছ। ১৯৭০ সালের অর্গানাইজড ক্রাইম কন্ট্রোল অ্যাক্ট অনসারে টেরেসা যতদিন সরকারের রাজসাক্ষী হয়ে থাকবে ততদিন ১০৮০ ডলার মাসিক ভাতা পাবে। যখন অপরাধ জগতের সম্রাট ছিল টেরেসা, দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করত। বর্তমানে মিসিগানের এক প্র্রত্যন্ত সেফ হাউজে, মার্শালদের প্রহরাধীন অবস্থায় প্রায় বন্দি জীবন কাটে তার স্রেফ শুয়ে বসে সময় কাটাতে হয় তাকে। বাইরে যাবর অনুমতি নেই জানের ওপর হামলার ভয়ে। টমাস সি. রেনারের কাছে নিজের মাফিয়া জীবন সম্পর্কে অকপটে যা বলেছে ভিনসেন্ট চার্লস টেরেসা, সেই বয়ানই আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ হয়েছে ‘মাই লাইফ ইন দ্য মাফিয়া’ নামে। মাফিয়া যে স্রেফ মিথ বা কল্প-কাহিনি নয় তার প্রমাণ মেলে বইটি পড়লে । শিকাগো ট্রিবিউন মূল বইটি সম্পের্কে মন্তব্য করেছে, ‘গল্পটি শ্বাসরুদ্ধকর… বর্তমানের সুসংগঠিত অপরাধীদের সম্পর্কে টেরেসা যে সব তথ্য দিয়েছে তাতে এ জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবাহক হিসেবে নিঃসন্দেহে তাকে আখ্যায়িত করা চলে মারিয়ো পুজোর ‘গড ফাদার’ পড়ে যাঁরা শিহরিত হয়েছেন তাঁরা ভিনসেন্ট টেরেসার ‘আমার মাফিয়া জীবন’-এর আত্মকথা পড়ে চমকিত, বিস্মিত এবং রোমাঞ্চিত না হয়ে পারাবেন না। মাফিয়াদের নিয়ে এ ধরনের চমকপ্রদ তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ আক্ষরিক অর্থেই আর কখনো লেখা হয়নি। ভিনসেন্ট চার্লস টেরেসার মাফিয়া ‘জীবন গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর।’
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
t

এই লেখকের আরো বই