মিশরীয় মিথলজি- আদি থেকে অন্ত : মিশর মানে পিরামিড, মিশর মানে মমি!
নীল নদ, হায়ারোগ্লিফিক!
স্ফিংক্স , আনুবিস, অভিশাপ, জাদু, মৃত্যু!
ফারাও, তুতানখামুন, নেফারতিতি, আমেনহোটেপ, রাণি ক্লিওপেট্রা!
কত পরিচিত অথচ কত রোমাঞ্চঘেরা সব নাম! ঐতিহাসিক চরিত্র হলেও যাদের ঘিরে রহস্য, উপকথা এবং উত্তর-না-জানা প্রশ্নের শেষ নেই। মিশর মানে অসংখ্য দেবতাও, যাদের নিয়ে রয়েছে অদ্ভুত সব পুরাণকাহিনী বা মিথ। শত শত বছর ধরে চলছে মিশর নিয়ে গবেষণা, তারপরেও রহস্য উদঘাটনের অপেক্ষায় থেকে যাচ্ছে অনেক মিথ। এই বইটিতে মিশর নিয়ে এ পর্যন্ত যা যা জানা গিয়েছে এবং যা যা জানা যায়নি অর্থাৎ যে সব রহস্যের এখনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি সব কিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক।
বইটির প্রথম পর্ব অর্থাৎ সূচনা পর্ব সাজানো হয়েছে মিশরীয় মিথলজির সংক্ষিপ্ত সারমর্ম, নীল নদ-কেন্দ্রিক সভ্যতার ইতিহাস, মিশরীয় পূরাণের উৎপত্তি, উৎস, ইতিহাস ও পূরাণ চর্চার ইতিবৃত্ত, হায়ারোগ্লিফিক সংক্রান্ত আলোচনা, কয়েকজন মিশরতত্ত্ববিদের কাজ, প্রাচীন মিশরীয় ধর্মীয় পাঠসমূহ ইত্যাদি নিয়ে। আসলে শুধু বিষয়ের উল্লেখ করে এর ব্যাপ্তি বোঝানো সম্ভব না।
দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে পিরামিড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। ধাপ পিরামিড থেকে শুরু করে গিজার পিরামিড- বিভিন্ন পিরামিডের গঠন , ইতিহাস, পিরামিড সংক্রান্ত মিথ, বিভিন্ন সম্রাটের সমাধি, সমাধি নিয়ে নানা রহস্য, বিভিন্ন মন্দির নিয়ে আলোচনা প্রভৃতি।
জীবন ও মৃত্যুর ধর্ম- এই হলো তৃতীয় পর্বের শিরোনাম। এ পর্ব সাজানো হয়েছে মূলত সৃষ্টিতত্ব, সৃষ্টিতত্বের দেবতাগণের বিস্তারিত পরিচয় , ওসিরিস পুরাণচক্র, মমিকরণের প্রক্রিয়া, অন্তেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়া ও রীতিনীতি, নরকের ধারনা এবং ধর্মে অবিশ্বাসীদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায়।
প্রাচীন মিশরের জাদুবিদ্যা, চিকিৎসাব্যবস্থা, অপদেবতা, গৃহদেবতা, জীবন যাত্রাপথের রীতিসমূহ, মিশরীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী শুভ ও অশুভ দিন, প্রাচীন মিশরীয় উৎসব, গান ও নাচ, পূর্বপুরুষদের পূজা ইত্যাদি আলোচনা চতুর্থ পর্বে রয়েছে।
পঞ্চম পর্বে প্যাপিরাসে লেখা যে প্রাচীন সাহিত্য পাওয়া গিয়েছে এ পর্যন্ত, বিভিন্ন সাম্রাজ্যের রাজারাণি বা সাধারণ মানুষের গল্প- সেগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে এই পর্বে। যেমন মোমের কুমিরের গল্প, ফারাও এবং বুদ্ধিমান চোর, অভিশপ্ত রাজকুমার- আরো সব আকর্ষণীয় গল্প।
ষষ্ঠ পর্ব বইয়ের শেষ পর্ব। এখানে রয়েছে মিশরের বিভিন্ন রাজবংশ নিয়ে বিশাল আলোচনা! প্রাক রাজবংশীয় অবস্থা, প্রথম , দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম রাজবংশ, ষষ্ঠ রাজবংশে এসে সাম্রাজ্যের পতন, একাদশ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, অষ্টাদশ ... আছে ফারাওদের ইতিহাস, সেই সাথে কোরআন ও বাইবেলে জোসেফের কাহিনী, বিপ্লবী ফারাও আমেনহোটেপ, রহস্যময় তুতানখামুন, রামিসেস দ্য গ্রেট, এক্সোডাস। তারপর আরো রাজবংশের কাহিনী- বিংশতম, দ্বাবিংশ, পঞ্চ, ষড়, সপ্তবিংশ.....। উহ্! লেখকের যে চার বছর সময় লেগেছে এই বই লিখতে তাতে আর আশ্চর্য কী! আলেকজান্ডার দি গ্রেট, টলেমি এবং রাণি ক্লিওপেট্রা- মোটামুটি কম প্রাচীন এই বিখ্যাত সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর আলোচনা দিয়ে শেষ হয়েছে এই পর্ব। এবং বইটিও এখানেই শেষ।
বলা দরকার, প্রচুর প্রাসঙ্গিক চিত্র রয়েছে বইটিতে। যদিও সাদাকালো কিন্তু তা বিষয়বস্তুকে বুঝতে এবং কৌতুহল নিরসনে যথেষ্ট সহায়ক। যারা ইতিহাস এবং মিথলজি পছন্দ করেন, যারা মিশর নামের রহস্যঘেরা সভ্যতাটিকে জানতে আগ্রহী- তাদের জন্য সোনার খনি এই বইটি। আমার ঠিক জানা নেই, এমন বিশাল কলেবরের বাংলা বই মিশর নিয়ে আর আছে কিনা। লেখকের অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রমের প্রশংসা আগেই করেছি, এবার প্রকাশকের কথা না বললেই নয়। ‘মিশরীয় মিথলজিঃ আদি থেকে অন্ত’ বইটি প্রকাশ করেছেন জাগৃতি প্রকাশনী।