চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

তৃতীয় পক্ষ

    কোটি মানুষের স্বপ্নের দেশ আমেরিকার মাটি ছোঁয়ার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তাদের জীবন কি সত্যিই স্বপ্নে মোড়ানো? যে রঙিন স্বপ্ন দু’চোখে নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমায় এই মানুষগুলো, তাদের স্বপ্ন কি আসলে জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতার অভিঘাতে হোঁচট খায় প্রতিনিয়ত? কিছু প্রবাসী বাঙালির গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে পাঁচটি বড় গল্প সম্বলিত ‘তৃতীয় পক্ষ’ গল্পগ্রন্থটি। লেখক ফরহাদ হোসেন নিজেই দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাসী। খুব কাছে থেকে দেখা প্রবাসীদের গল্পগুলো ফরহাদ হোসেনের মতো একজন সুলেখকের কলমের আঁচড়ে হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠবে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। গল্পের মূল উপজীব্য একজন পুরুষ, একজন নারী এবং অপরজন তৃতীয় পক্ষ, যার ভূমিকা প্রথম দুই তরফের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ছাপ রেখে যায়। এই তৃতীয় পক্ষই ‘তৃতীয় পক্ষ’ গল্পগ্রন্থের গল্পগুলোর মূল ভূমিকায় আসীন। প্রথম গল্প ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ টানটান উত্তেজনায় ভরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগোর মাটিতে পা রেখে বাংলাদেশের একটি সহজ সাধারণ মেয়ে যখন দেখে তাকে নেওয়ার জন্য তার স্বামী বিমানবন্দরে আসেন নি, তখন তার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে সেটি সহজেই অনুমেয়। বিদেশ বিভূঁইয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি শহর, তার চাইতে বড় সমস্যা বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা এবং মেয়েটির পর্যাপ্ত শীতের কাপড় নাই। পুরো গল্পটি জুড়ে অনেক প্রশ্ন পাঠকমনে নাড়া দিয়ে যায়। সোমাকে কি তার স্বামী শহীদ ধোঁকা দিয়েছে? এখন কী করবে সে? সে কি দেশে ফিরে যাবে? তাকে আশ্রয় দিয়েছেন ফরিদ, স্ত্রী যাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তার সঙ্গে কি সোমার নতুন কোনো সম্পর্কের সূচনা ঘটবে? শেষ পর্যন্ত কিন্তু ফরিদ সোমার প্রিয় মানুষই হয়ে যায়; প্রিয়, অথচ দূরের। গল্পের শেষটা ভীষণ অন্যরকম। সত্যিই জীবন বড় অদ্ভুত। কাছের মানুষ ছেড়ে চলে যায়, অথচ দূরের কেউ সামান্য পরিচয়েই সবচেয়ে প্রিয় ভেবে নেয়। এটাই হয়তো জীবনের ট্রাজেডি; কিংবা, এটাই জীবনের সৌন্দর্য। সোমা এবং শহীদের জীবনে তৃতীয় পক্ষ হাসান কি আসলেই তৃতীয় পক্ষ? পুরো গল্পটা জুড়ে হাসানই কি মধ্যমণি নয়? ‘হৃদয়ে আগন্তুক’ গল্পে প্রিয় বান্ধবী রূপার আগমনের খবর শুনে আনন্দে ঝলমল করে উঠেছিল যে দু’চোখ, তিথি কি জানতো মাত্র ক'দিনের ব্যবধানেই তার সেই দু’চোখ জলে ভরে উঠবে? রূপার স্বামী তাকে ছেড়ে গেছে, রূপা একা। কিন্তু একসঙ্গে থেকেও তিথি আর হাসান নিজেরাও কি একা নয়? প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে দু’জন মানুষ একসঙ্গে থেকেও ভেতরে ভেতরে যে কতটা একা হয়ে পড়ে, রূপা এসে সেটাই যেন তাদের বুঝিয়ে দেয়। তৃতীয় পক্ষ রূপার আগমনে হাসান আর তিথির জীবনে যে ঝড় ওঠে, তারা দু’জন কি পারে সম্পর্কের আলগা হওয়া সুতোয় নতুন করে মালা গাঁথতে? রূপা কি পায় তার একাকী জীবনে পথ চলার জন্য বিশ্বস্ত একজোড়া হাত? অন্য কারুকে মনের ভেতর সঙ্গোপনে রেখে শরিফের সাথে সামরিক ঘর করেছে রুবিনা, কিন্তু কিসের অপেক্ষায়? শরিফের প্রচন্ড ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে রুবিনা সোহেলের কাছে ছুটে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে কি পায় তার বিশ্বাস এবং ভালোবাসার মর্যাদা? সে নিজেই কি রাখতে পেরেছে তার স্বামীর বিশ্বাস এবং ভালোবাসার মর্যাদা? এত কিছুর পরেও শরিফ কি অপেক্ষা করে রুবিনার জন্য? রুবিনার বিশ্বাসের অমর্যাদা করে সোহেলের প্রাপ্তিই বা কী? ‘অপেক্ষা’ গল্পে তৃতীয় পক্ষ আসলে কে? শরিফ আর রুবিনার জীবনে সোহেল? নাকি সোহেল আর রুবিনার জীবনে শরিফ? অথবা মারিয়া? রুবিনা, সোহেল, শরিফ - গল্পের মূল চরিত্র শেষ পর্যন্ত কিসের অপেক্ষায় থাকে? স্বামী-সন্তান ছেড়ে শায়লার আকস্মিক অন্তর্ধানের রহস্যটা কী? স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছে সে? নাকি দিনের পর দিন শাহেদের ব্যস্ততা শায়লার কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে? শায়লা আর শাহেদের জীবনের তৃতীয় পক্ষ মাশুক কি দিতে পেরেছে শাহেদের বন্ধুত্বের মর্যাদা? আসলে ‘কী ঘটেছিল লাসভেগাসে’? রঞ্জু আর সোমা দুজনেই চমৎকার মানুষ, তবুও তাদের মধ্যে সারাক্ষণ কথা কাটাকাটি লেগে থাকে। ‘একজন আজমল হোসেন’কে দুঃসময়ে পাশে থেকে আশ্রয় দেয়, সাহায্য করে তারা। স্বপ্নের শহর নিউইয়র্কে সোনার হরিণের খোঁজে আসা একজন আজমল হোসেনের জীবন কাহিনী যেন ওদেশে ছুটে যাওয়া লক্ষ মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা। একটা গ্রিনকার্ডের আশায় বছরের পর বছর অপেক্ষা শেষে শেষ পর্যন্ত আজমল হোসেনের একটাই চাওয়া থাকে - জীবনের শেষ দিনগুলোতে দেশে ফিরে তিনি যেন তাঁর বাবামা’র সাথে কাটাতে পারেন। ‘তৃতীয় পক্ষ’ গল্পগ্রন্থের পাঁচটি গল্পে উঠে এসেছে প্রবাস জীবনের প্রতিদিনকার সুখ-দুঃখ আর জীবন সংগ্রামের কথা; মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস আর সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প। বোনাস হিসাবে পাওয়া যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গার বর্ণনা। বিনে পয়সায় ঘুরে আসা যাবে লেক মিশিগান, সিয়ার্স টাওয়ার, গ্রেপ ভাইন লেক, কিংবা লাস ভেগাস। গল্পের প্রয়োজনে বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ এবং বাক্যের ব্যবহার হয়েছে, তবে ইংরেজি শব্দ এবং বাক্যের ব্যবহার যথাসম্ভব কম রাখা গেলে ভালো। গল্পগুলো ইতোপূর্বে অনলাইনে পড়া হয়েছে। কিন্তু চমৎকার প্রচ্ছদে অসাধারণ ছাপার মান সম্বলিত মোড়কে একটানে গল্প পড়ার আনন্দটাই অন্যরকম। -লুৎফুন্নাহার পিকি
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
ফরহাদ হোসেন: 
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুর শহরে।

ফরহাদ হোসেন, আমেরিকা প্রবাসী একজন লেখক, চিত্রনাট্যকার, নির্মাতা, প্রযোজক, সঞ্চালক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক। শিকাগোর বিখ্যাত ডিপল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস-এ স্নাতকোত্তর, বর্তমানে আমেরিকার একটি প্রখ্যাত ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানীতে আইটি কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত শশব্যস্ত ফরহাদ হোসেনের সিংহভাগ সময় কাটে লেখালেখি, নাট্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে।  

উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন ধারার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবাধ বিচরণকারী ফরহাদ হোসেন মূলত নিরীক্ষাধর্মী চিত্রনাট্য লেখার মাধ্যমে তার লেখালেখির জগতে পদচারণা শুরু করেন। 

লেখালেখির সাথে তার ভালোবাসা ও সম্পর্ক দীর্ঘকালের। দশ বছরেরও অধিক সময় ধরে তিনি গল্প লিখে চলেছেন। থেমে থাকে নি উপন্যাস লেখার কাজও।

গল্প বা উপন্যাস যে কোনো লেখাতেই বিষয় ও আঙ্গিকে তিনি এক স্থানে স্থির হয়ে নেই। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তিনি নিজের লেখাকে গড়ে তুলেছেন নিপুণ হাতে। নিজের অভিজ্ঞতা ও পড়াশোনার ভিত্তিতেও তিনি সৃজনশীল সাহিত্যের এই শাখাটিতে বিবর্তনের এক নতুন ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। 

লেখালেখিতে নতুন স্বাদ আনায় তার জুড়ি নেই। বিষয়বস্তু ও ভাষার ব্যবহারে তাঁর প্রতিটি লেখাই অনন্য। 

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুটি। সমকালীন গল্পগ্রন্থ ‘তৃতীয় পক্ষ’, অন্যপ্রকাশ থেকে এবং ছোট গল্পের সংকলন ‘ধূসর বসন্ত’, আনন্দম প্রকাশনী থেকে। দুটি বইই প্রকাশিত হয় অমর একুশে বইমেলা ২০২০ এ। দুটো সংকলনই পাঠক সমাদৃত হয় এবং সুসমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বর্তমানে স্ত্রী, এক কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে বসবাস করছেন টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে।

এই লেখকের আরো বই