চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

প্রবঞ্চনা

    মাঝেমাঝে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রবল আলোড়ন তুলে যায় সমাজ ও রাষ্ট্রে। একটার পর একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ক্ষেপিয়ে দিয়ে যায় সাধারণ মানুষকে। মানুষ রাস্তায় নেমে আসে অপরাধীর বিচার চাইতে, পত্র পত্রিকা মিডিয়ায় লেখালেখি হয়, আলোচনার ঝড় ওঠে চায়ের টেবিল, আড্ডা, টকশোতে। অসম্ভব ক্ষোভে ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ এ ধরনের অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করার জন্য অভিনব সব শাস্তির প্রস্তাব করেন। কিন্তু এমন অনেক অপরাধ রয়েছে যেগুলো দৃষ্টির অন্তরালেই থেকে যায়। খালিচোখে ধরা না পড়ার কারণে দিনের পর দিন একই কাজ করে চলে অপরাধী। একসময় বেপরোয়া থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মানুষকে প্রতারণা করে অর্থ উপার্জন, জুয়া খেলা, মাতাল হয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন- এগুলো হয়তো এখন আর অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয় না। হলেও একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বলে বেশিরভাগ মানুষ এড়িয়ে যায়, দেখেও না দেখার ভান করে। আবার রাজনৈতিক মাঠে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়, অন্ধকার জগতের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তরতর করে উপরে উঠে যেতে চায় কেউ কেউ। অথচ সমাজে তাদের সম্মানজনক অবস্থান। স্ত্রীকে ধোকা দিয়ে রাতের পর রাত অন্য নারীদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে রাখা নিজেকে- সমাজের চোখে এগুলোও তেমন কোন অপরাধ নয়। কিংবা কেবলমাত্র ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে প্রেমিকার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে নিয়ে মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে তাকে সরিয়ে দেয়া প্রেমিকার জীবন থেকে, অথবা নিছক খেলার ছলেই নিরপরাধ কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া- ধরা পড়ে না বলে এগুলোও কোন অপরাধের ঘটনা নয় আপাত চোখে। কিন্তু এই বিচার বহির্ভূত অন্যায়গুলো কখনো কখনো প্রচন্ড বিক্ষুব্ধ করে তোলে বিবেকবান মানুষকে। মনে হয় অলৌকিক কিছু একটা ঘটে যেতো! অভিনব উপায়ে শাস্তি পেয়ে যেতো অপরাধীগুলো ! তাতে অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতো সেই অত্যাচারিত স্ত্রীটি, প্রতারিত প্রেমিকাটি বা সেই জননী- এক সন্তান হারানোর প্রবল আঘাতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে থেকে অসহায় চোখে দিনের পর দিন যাকে দেখে যেতে হচ্ছে অন্য সন্তানের লাঞ্ছনা। 'প্রবঞ্চনা' উপন্যাসের লেখক সৈয়দা শর্মিলী জাহান অভিনব উপায়ে শাস্তি প্রদানের কথা ভেবেছেন বিচারের বাইরে থেকে যাওয়া এই অপরাধীদের। মানুষরূপী অমানুষদের সীমাহীন নিষ্ঠুরতার কারণে যাদেরকে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়, বড্ড অসময়েই চলে যেতে হয় পৃথিবী ছেড়ে, সেই অতৃপ্ত আত্মারা প্যারালাল এক ভুবনে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পৃথিবীর এই অমানুষগুলোকে শায়েস্তা করে অদ্ভুত সব উপায়ে। গল্পের অতৃপ্ত আত্মা ইতুলের মাথায় অভিনব সব ভাবনা খেলে যায়। তাকে সাহায্য করে এনজেল বেবি নামের একটি ছোট্ট বাচ্চা আর হোয়াইট মিউ নামের একটি বিড়ালের আত্মা। তাদের মজার মজার সব কর্মকাণ্ড কখনো পাঠককে হাসায়, তাদের কষ্টগুলো কখনো ছুঁয়ে যায় পাঠকের অন্তরাত্মা। খারাপ মানুষেরা তাদের ভয় পায়, কিন্তু ভালো মানুষের বন্ধু, প্রিয়জন হয়ে ওঠে তারা। তাদের কারণে মন্দলোকেরা কেউ কেউ বদলে গিয়ে ভালো হয়ে যায়, কেউ কেউ অপরাধের গ্লানিতে ভুগে নিজের জীবনটাকেই শেষ করে দেয়ার কথা ভাবে। আর মুনিয়া নামের শৈশবের পিতৃহারা সেই মেয়েটি? মায়ের আবার বিয়ের করার কারণে মামার কাছে যে বড় হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তার মতোই দুখী ইমন যার কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে, তারপর প্রবল উচ্চাকাঙ্খী শাওনের প্রেমিকা থেকে স্ত্রী হয়ে যে জানতেও পারে না শাওনের প্রতারণার কথা তার কী হয়? মুনিয়ার গল্পটা নাহয় আমরা বই পড়েই জেনে নেই। নতুন ভাবনার উপন্যাসটি পড়ে এইটুকু অন্তত বলতে পারি, বইটি আপনাকে অতৃপ্ত করবে না, বরং তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেবে পাঠকের আত্মা।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
t

এই লেখকের আরো বই