চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

সমাপ্তি

    মেঘনার বুক জুড়ে বয়ে চলে যে জলধারা, কত শত ঘটনার সাক্ষী হয় সে প্রতিনিয়ত। তেমনই এক ঘটনার গল্প নিয়ে সমাপ্তি, যে গল্পের সূচনা আজ থেকে পাঁচ দশক আগে। মেঘনার বয়ে চলা জলধারার মতন এ গল্পে সমান্তরাল বয়ে গেছে - সুখনচরের অসহায় নির্বিবাদী গৃহবধূ জমিলা বিবির প্রতিবাদী হয়ে ওঠা, আর দীঘলনন্দী গাঁয়ে বেড়ে ওঠা কিশোরী জয়ার জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার নাড়িছেঁড়া বেদনার গল্প। মেঘনাপারে বেড়ে ওঠা দুই নারী, জয়া আর জমিলার জীবনের সুখদুঃখ, আনন্দ-বেদনার এ গল্প পাঠককে আলোড়িত করে। ------------ “দাদির ঘরে যাওয়ার পথে বারান্দায় দেখা হয়ে গেল রাশেদের সঙ্গে। জয়ার পা দুটো যেন কেউ মাটির সঙ্গে গেঁথে দিয়েছে। কয়েক মুহূর্তমাত্র, আচমকা জয়ার হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেল রাশেদ। রাশেদ সঙ্গে সঙ্গেই ওর হাত ছেড়ে দিয়েছে, তারপরেও জয়ার হাতপা, সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে এখনও। ফিসফিস করে, যেন খুব গোপন কোনো কথা বলছে, এমনভাবে বলল রাশেদ, ‘জয়া তরে অনেক বড় হইতে অইব। মন দিয়া লেহাপড়া করতে অইব।‘ চমকে রাশেদের দিকে তাকাল জয়া। পড়াশোনার কথা তো সবসময়েই বলে আসছে রাশেদ ভাই, ওকে আর বকুলকে। কেন তবে এই গোপনীয়তা? সরাসরি রাশেদের চোখের দিকে তাকায় জয়া, “ক্যান? আমি পড়ালেহা করলে আফনের কী লাভ?’ ‘আমি কইছি হের লাইগা পড়বি তুই।‘ রাশেদের কন্ঠে উপদেশ নয়, অনুনয় নয়, এ যেন অনতিক্রম্য কোনো দাবী। রক্তিম হল জয়ার দু’গাল। মাথা নীচু করে কোনোমতে বলল, ‘চিডি দিয়েন কইলাম।‘ তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল। রঙ্গীন পাখায় ভর করে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বাড়ি এল জয়া। সে ভুলে গেল তার আর রাশেদের মধ্যকার ব্যবধান। সে রাতে দু’চোখে ঘুম এল না। স্বপ্ন আর জাগরণের এক অদ্ভূত সম্মোহনে সমস্ত রাত্রি কেটে গেল। তার মনে হতে লাগল, আকাশের সব তারা বুঝি নেমে এসে জড়িয়ে ধরেছে তাকে, সর্বাঙ্গ আলো করে ফুটে আছে সহস্র জোনাকি। জীবনে যেন তার আর কিছুই চাইবার নাই। তার এতদিনকার প্রশ্নের উত্তর সে পেয়ে গেছে। হায়, জয়া যদি জানত! জীবনের সূচনালগ্নে যাকে নিয়ে ভাবি জীবনের কল্পনায় সে শিহরিত হচ্ছিল, সেই স্বপ্নপুরুষের সঙ্গে তার আর কোনোদিন দেখা হবে না।“ --------- “সদর দরজায় শব্দ হল। জমিলা দেখল পাজামা পাঞ্জাবি পরে রুস্তম বেরিয়ে গেছে। এতক্ষণ যা হয় নি, রুস্তমকে চলে যেতে দেখে জমিলার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। ভেতর থেকে উদ্গত অশ্রুর বাঁধ আর বাধা মানল না। সেখানেই চৌকাঠে বসে পড়ে জীবনের আসন্ন দুর্যোগের কথা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়ল বধূ জমিলা। কান্নার দমকে ফুলে ফুলে উঠতে লাগলো তার পিঠ, তার সমস্ত শরীর। ঝড়ের ঘূর্ণনে ধেয়ে আসা প্রবল জলোচ্ছ্বাসও একসময় থিতু হয়। বানভাসি মানুষের সর্বহারা চোখও শূন্য জমির পলিতে নতুন করে বীজ বপনের স্বপ্ন দেখে। চোখ নিংড়ে বয়ে যাওয়া বুকের ভেতরকার জমে থাকা জল নিঃশেষ হয়ে গেলে জমিলা একসময় উঠে বসে। শাড়ির আঁচলে দু’চোখ মুছে সে ধীর পায়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। দেউড়ি ঘরে মোজাম্মেলের ছেলে রফিককে বসিয়ে রেখে সদর দরজা খুলে বাইরে পা বাড়ায়। যেতে যেতে একবার পিছু ফিরে দেখে। শূন্য চোখে চারদিকে তাকায়। তিল তিল করে গড়ে তোলা তার সাজানো সংসার। হঠাৎ তার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এখনো কিছুই শেষ হয়ে যায় নি। একজন আছেন যিনি তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন। জোরে জোরে পা চালাতে থাকে জমিলা।“
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
t

এই লেখকের আরো বই