জীবন যাপনে আমূল পরিবর্তন আনতে কীভাবে সাজাবেন আপনার বাসা, অফিস এবং চারপাশের অন্যান্য অনুষঙ্গ? জীবনে পরিপাট্যতা আনয়নের পুরো প্রক্রিয়াটিই এই বইয়ে সন্নিবেশিত হয়েছে।
আসলেই কী চারপাশ গুছিয়ে রাখার মাধ্যমে জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব? সোজা সাপটা জবাব হলো, সম্ভব। কিন্তু চারপাশে পরিপাট্যতা ধরে রাখাটাই যে মুশকিল ব্যাপার! সবকিছু সুন্দরভাবে গোছানোর পর পুনরায় অগোছালো হয়ে পড়েননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বারবার না হলেও জীবনে অন্তত একবার আমরা এমন জটিলতায় পড়েছি।
এবার আপনার কথায় আসি। বলুন তো, কখনো কী এমন হয়নি, আপনি বাসার সবকিছু খুব যতœ সহকারে গুছিয়ে পরিপাটী করে রেখেছেন আর খুব দ্রুতই সেগুলো অগোছালো হয়ে পড়েছে?
যদি তেমনটিই হয়ে থাকে, তবে এই বিষয়ে সফলতা লাভের গোপন মন্ত্রটি হলোÑ শুরুতেই চারপাশের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো একত্রিত করে সেগুলোকে আপনার জীবন থেকে বিদেয় করে দিন। তারপর মাত্র একবারের কর্ম প্রচেষ্টায় আপনার চারপাশকে সাজান সুশৃঙ্খলভাবে, সম্পূর্ণ নতুন করে নতুন উদ্যমে।
আপনি যদি এই পদ্ধতিটি মেনে চলেন, আমি সেটিকে বলি ‘কন মেরি মেথড’, তবে কথা দিচ্ছি আপনাকে আর অগোছালো হয়ে পড়ার ঝামেলা পোহাতে হবে না।
আসলে এভাবে মানিয়ে গুছিয়ে চলার ব্যাপারটি আমাদের জীবনের চিরাচরিত নিয়ম বহির্ভূত বিষয়। তবে জীবনে পরিপাট্যতা নিয়ে আসতে যারা এই বিষয়ের উপরে কোর্স করেছেন, তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে সুন্দর কিছু ফল পেয়েছেন। ঠিক যেন ‘মেঘ না চাইতে জল’ এর মতো। বাসার প্রতিটি দ্রব্য-সামগ্রী সুশৃঙ্খলভাবে ও সুচারুরূপে গুছিয়ে রাখার মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের অন্যান্য দিকেও সফলতার সন্ধান পেয়েছেন। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার জীবনে শতকরা আশি ভাগেরও বেশি আগ্রহ পরিপাট্যতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি নিবেদন করেছি এবং বুঝতে শিখেছি, পরিপাটী হয়ে জীবন যাপনের এই শিক্ষা সত্যিই একটি জীবনকে বদলে দিতে পারে।
জীবনের এই সুন্দর পরিবর্তন যদি সত্যি আমাদের জীবনে ঘটে তবে কেমন হয়? নিশ্চয়ই খুব ভালো। কিন্তু পরিপাট্যতার চিরাচরিত নিয়মানুসারে আপনি যদি প্রতিদিন মাত্র একটি অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাতিলকরণের প্রতি আগ্রহী হন তবে জীবনে তেমন কোন পরিবর্তন আসবে না। উল্লেখযোগ্য ফলাফল পেতে এই চিরাচরিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। আর এই পরিবর্তিত পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতাই আপনাকে বলে দেবে, একটি সাজানো গোছানো বাসা বলতে আসলে কী বুঝায়, কেমন তার গঠন, কেমন-ই বা তার রূপ।
আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন থেকেই আবাসন এবং লাইফস্টাইল সংক্রান্ত বিভিন্ন ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করেছিলাম। এইসব ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায় একটি সুন্দর জীবনের গ্রাণের সন্ধান পেয়েছিলাম। আর তখন থেকেই পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি জীবন যাপনের দিকে আমি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। আমি পনের বছর বয়স থেকে পরিপাট্যতার সমস্ত গলি-ঘুপচি আত্মস্থ করতে উঠে পড়ে লাগি। এই বিষয়ে পড়াশোনাও শুরু করে দেই। জীবনকে সুবিন্যস্ত ও পরিপাটি করে তোলার প্রতি আমার এই অমোঘ টান আর অদম্য স্পৃহা আমাকে ‘কন মেরি’ মেথডটির (মেথডটির নামকরণ হয়েছে আমার নামের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের সমন্বয়ে) উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে আমি পরিপাট্যতা বিষয়ক কনসালট্যান্ট। আমার অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয় পরিপাট্যতা বিষয়ক কনসালট্যান্ট। আমার অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয় সুশৃঙ্খল আর সুবিন্যস্ততার কাজে, কখনো কোন বাসায় কিংবা কোন অফিসে। যারা সুন্দর ও সুবিন্যস্ত জীবন যাপনে সমস্যা বোধ করেন, কিংবা যারা পরিপাট্যতার কাজ শেষে পুনরায় অগোছালো হয়ে পড়ার ‘ঝামেলা, পোহান রোজ, তাদেরকে তাৎক্ষণিক পথ নির্দেশ করাই আমার কাজ। তাদেরকেও পরামর্শ দেই যারা জীবনে সুবিন্যস্ততা নিয়ে আসতে আগ্রহী কিন্তু জানেন না ঠিক কোথা থেকে, কীভাবে কাজটি শুরু করবেন।
পরিপাট্যতার কাজ শেষে আমার মক্কেলরা ভুরিভুরি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাতিল করেছেন। জামা-কাপড়, অন্তর্বাস থেকে শুরু করে হরেক রকমের স্থিরচিত্র, কলম, ম্যাগাজিনের স্তুপ, সাজগোজের মেকাপÑ বলতে গেলে অপ্রয়োজনীয় লক্ষাধিক জিনিসপত্র। এসব মোটেও অত্যুক্তি নয়। পরিপাট্যতার কাজ শেষে একবার এক মক্কেল দুই শত পঁয়তাল্লিশ লিটারের বাহুল্য জিনিসপত্রে ঠাসা ব্যাগ বাইরে নিক্ষেপ করেছেন। ভাবা যায়!
অপরের অগোছালো জীবনকে গুছিয়ে তুলতে যে সহযোগিতাটুকু আমি করেছি এবং করছি, সেই সাথে জীবনে সুবিন্যস্ত হওয়ার আটকে খুঁজতে গিয়ে যে অনুসন্ধানী গবেষণা আমাকে করতে হয়েছে; সেইসব অভিজ্ঞতা থেকে আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে বলতে পারি ঃ আপনার বাসার একটি নাটকীয় পরিবর্তন আপনার জীবন যাত্রা ও দৃষ্টিভঙ্গির মাঝেও একটি নাটকীয় পরিবর্তনের জন্ম দেয়। আর এটিই জীবনের পরিবর্তিত রূপ।
আমি তেমনটিই মনে করি। আসলেই কি পরিপাট্যতার কোর্স শেষে আমার মক্কেলেরা তাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তনের দেখা পেয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি হর-হামেশাই তাদের কাছ থেকে যেসব ক্ষুদ্রা বার্তা পেয়ে থাকি সেসবের কয়েকটি উল্লেখ করছি-
আপনার এই কোর্সটি করার পর আমি আমার চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। পরে শৈশব থেকে লালিত একটি স্বপ্ন- নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করেছি।
আপনার এই কোর্স থেকে শিখেছি আমার কোনটি প্রয়োজন এবং কোনটি নয়। পরবর্তীতে আমি ডিভোর্স নিয়েছি এবং এখন আমি সত্যি অনেক সুখী।
একটি সত্তার সঙ্গে বসবাস করতে আমি খুব উদ্গ্রীব ছিলাম। আমার বর্তমান জীবনে নিজের মাঝে সেই সত্তার খোঁজ পেয়েছি।
খুব আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বেচা-কেনার স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখার পর থেকে আমার বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে!
আমরা স্বামী-স্ত্রীতে এখন অনেক ভালো আছি।
কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দূরে নিক্ষেপের মাধ্যমে আমার জীবন অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে।
অবশেষে আমি মাত্র দশটি পাউন্ড খরচ করেই সফল!
সত্যি আমার মক্কেলরা এখন অনেক সুখী। জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খলাবোধ তাদের গোটা জীবনের গতিপথকেই বদলে দিয়েছে। শুধুই কী বর্তমান জীবনের গতিপথ? পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও পরিপাট্যতার দিকে অভ্যস্ততা তাদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাতেও এনেছে পরিবর্তন। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? কিভাবে এর সূচনা? এসব জিজ্ঞাসার জবাব বইটির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। এক কথায় বলতে গেলে, আপনার প্রিয় নীড়টিকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলবাবে গুছিয়ে রাখার মাধ্যমে মূলত আপনি আপনার জীবনকে ঘিরে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলোকেই সুসজ্জিত করেন এবং সেই সাথে গুছিয়ে নেন আপনার অতীতকেও। জীবনের এই পরিপাটী রূপ আপনাকে বলে দেয় কোনটি আপনার প্রয়োজন এবং কোনটি নয়। পরিবর্তনের এই রীতিই নির্ধারণ করে দেয় আপনার ভবিষ্যৎ করণীয় কি হবে এবং কি হবে না। সম্প্রতি আমি একটি প্রাইভেট কোর্স শুরু করেছি। কোর্সটি মক্কেলদের বাসায় এবং কোম্পানী মালিকদের অফিসে চালু হয়েছে। এমন কোর্স মূলত শুধু একজন মক্কেলের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ কোর্সের শিক্ষার্থী মতে একজন। কিন্তু মক্কেলদের আগ্রহের আতিশয্যে বাইরের বিভিন্ন মক্কেলের কাছেও আমাকে যেতে হয়। আমার কাছে ইতোমধ্যে তিন মাসের ওয়েটিং লিস্ট জমা পড়েছে। যারা আমার এই কোর্স সম্পর্কে পূর্বে অবগত হয়েছেন কিংবা পূর্বের মক্কেলদের সাথে যাদের একটু জানাশোনা ছিল তারা প্রায় প্রতিদিনই এই কোর্সের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন, তারা নতুন কোর্স সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। পরিপাট্যতা সংশ্লিষ্ট কাজে জাপানের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াই। সুন্দর ও ফিটফাট জীবন যাপনের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও ভালবাসা আমার এই ছুটে বেড়ানোর পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আবার কখনো কখনো জাপানের গন্ডি পেড়িয়ে ওপারেও যাই। একবার মা-বাবাদের জন্য আয়োজিত একটি পাবলিক লেকচারের টিকেট বা খুব দ্রুতই বিক্রি হয়ে গেল। আর সেই পাবলিক লেকচারে ওয়েটিং লিস্ট থেকে কিছু নাম বাদ দেয়ার পরও অনেকগুলো নাম সেই লিস্ট দখল করে ছিল। স্বভাবতই একটি বিষয়ে বারবার একই আলোচনা করি না। আর ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিশ্চয়ই খুব বাজে! কিন্তু পুনরাবৃত্তি না করার প্রবণতাই যদি আমার ‘কন মেরি’ মেথডকে সফল করে তোলে তবে ক্ষতি তো কিছু নেই!
যারা ব্যক্তিগত জীবনে ‘কন মেরি’ মেথডটির অনুসরণ করেন তারা আর কখনো পূর্বের অগোছালো জীবনে ফিরে যেতে পছন্দ করেন না। কারণটি হলো, তখন তারা জেনে যান কীভাবে চারপাশের পরিবেশকে সাজাতে হয়। এই বিষয়ে এর অধিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না। আমার কোর্সের গ্রাজুয়েটদের জীবন মাঝে মাঝে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে চেষ্টা করি তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে এই কোর্স থেকে আসলে কতটুকু উপকৃত হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাই, এর মাধ্যমে তারা শুধুমাত্র তাদের বাসা বা অফিসই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখেননি, কোর্স শেষে তারা চারপাশের উন্নতি কল্পেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের পাঠানো স্থিরচিত্রগুলো কিছু পরিবর্তনের ঈঙ্গিত বহন করে। কোর্স চলাকালীন অবস্থার তুলনায় এখন তারা তাদের জীবনে অনেক কম জিনিসপত্রের অধিকারী, নতুন করে তারা বাসা বা অফিসের কক্ষগুলোও সাজিয়েছেন। স্থিরচিত্রগুলোয় পরিচ্ছন্ন জীবনের ঘ্রাণ খুঁজে পাই। আসলে তারা এখন তাদের ভালোলাগার সাথে বাস করতে জানেন, এটিই পরম তৃপ্তিদায়ক।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, আমার এই সামান্য কোর্স অপরের জীবনকে পরিবর্তিত করে কেন, কীভাবে? মোদ্দাকথা হলো, এই কোর্সের অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতিটি শুধুমাত্র কিছু কলাকৌশলের সমন্বয় নয়। পরিপাট্যতার পুরো বিষয়টি আসলে কিছু সাধারণ কাজের সমষ্টি, যার মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে জিনিসপত্রের স্থানান্তর ঘটে। উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত জিনিসপত্রের স্থানান্তরই এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়। কাজটি অনেক সহজ, ছয় বছরের একটি বাচ্চাও করতে পারে; যদিও অনেক পরিণত মানুষই তাদের জীবনে এর প্রয়োগ ঘটাতে পারেন না।
সুচারুরূপে পরিপাটী করার কিছুক্ষণ পরই দেখা যায় তাদের সবকিছু আবার অগোছালো হয়ে পড়েছে। এটি আসলে অদক্ষতার কারণে গটে না, বরং সচেতনতাবোধের অভাব থেকেই এমনটি ঘটে থাকে। তারা সুশৃঙ্খলভাবে সবকিছু গুছিয়ে চলার বিষয়টিকে প্রাত্যহিক অভ্যাসে পরিণত করতে পারেননি। অন্যভাবে বলতে গেলে, সমস্যার গোড়া আমাদের মনেই গ্রথিত। আমাদের মানসিক গঠনের উপরই নব্বই ভাগ সফলতা নির্ভর করে। পরিপাট্যতা যাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য, সেইসব ভাগ্যবানদের কথা বাদ দিলে বলতে হয়, অপ্রয়োজনীয় যত উপকরণই আপনি বাদ দেন না কেন অথবা যত সুচারুভাবেই সুশৃঙ্খল হওয়ার চেষ্টা করুন না কেন জীবনে পরিপাটি হওয়ার এই যাত্রায় আপনাকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
তাহলে এমন সমস্যার মোকাবেলায় যথাযথ মানসিক অবস্থা অর্জন করার উপায়? এই অর্জনের পথে শুধুমাত্র একটি পথই খোলা আছে। আপাতবিরোধী পথটি হলোÑ সঠিক কলাকৌশল রপ্ত করা। খেয়াল করুন, বইটিতে বর্ণিত কন মেরি’ মেথডটি ‘সজ্জিতকরণ, শৃঙ্কলাবদ্ধকরণ, ও বাতিলকরণের জন্য নিছক কয়েকটি নিয়মের সমষ্টি মাত্র নয়, আপনার সঠিক মানসিক অবস্থা অর্জনের জন্য এটি একটি দিক নির্দেশনাও বটে। এই মানসিক অবস্থাই আপনাকে নির্দেশ করবে আপনি কিভাবে জীবন যাপনে ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হবেন, সেই সাথে কীভাবে একজন পরিপাটি ও সুশৃঙ্খল মানুষ হয়ে উঠবেন।
যারা আমার কাছে শিখেছেন তারা সবাই তাদের জীবনে অনেক পরিপাটি এমনটা দাবি করছি না। অনাকাঙ্খিতভাবেই, কোর্সটি সম্পন্ন করার পূর্বে অনেক বিভিন্ন কারণে কোর্সটি বাদ দিয়েছেন। আবার অনেকে আশা করেছিলেন তাদের সম্পূর্ণ কাজটি আমি স্বউদ্যোগে স্বহস্তে করে দেবÑ কোর্সটি বাদ দেয়ার এটিই একটি কারণ। একজন শৃঙ্খলাপ্রেমী পেশাদার হিসেবে বলব, অন্যের চারপাশকে সুশৃঙ্খল করতে আমি কতটুকু পরিশ্রমী কিংবা জীবনে বেঁচে থাকার অনুষঙ্গগুলো সাজাতে কত নিখুঁত পদ্ধতি আমি উদ্ভাবন করেছি এসব আসলে কোন ব্যাপার নয়। অপরের আবাসকে সত্যিকার অর্থে সুসজ্জিত ও পরিপাটি করে তুলতে আমি দারুণভাবে ব্যর্থ। আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন ‘কেন?’?
কারণটি হলো, একজন মানুষের নিজস্ব জীবনধারা সম্পর্কে সচেতনতাবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি যেকোন রকমের কলাকৌশল, শৃঙ্খলা পদ্ধতি ও অন্যান্য সব নিয়ম-নীতি থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন কিভাবে তার জীবনকে যাপন করতে চায়, ব্যক্তিগত এই মূল্যবোধের উপরই শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে।
অধিকাংশ মানুষই তাদের জীবনে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হয়ে বাঁচতে চান। কেউ যদি একটিবারের জন্যও তার চারপাশের পরিবেশকে সুশৃঙ্খল করে গুছিয়ে রাখেন, তিনি মনেপ্রাণেই এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাইবেন। পরিপাট্যতার সৌন্দর্য এখানেই। আবার বাস্তবিক পক্ষে এমন সুশৃঙ্খল হয়ে জীবন-যাপন করার সত্যতা নিয়ে অনেকে অবিশ্বাস পোষণ করেন। তারা যখন দেখেন সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা জিনিসপত্র সব খুব দ্রুতই আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে তখন গোছানোর সমস্ত পদ্ধতি ও চেষ্টাই তারা বাদ দেন। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, চাইলেই প্রত্যেকে তাদের চারপাশ সুশৃঙ্খলভাবে সাজাতে পারেন।
তেমনটি করতে সর্বপ্রথম আপনার অভ্যাসগুলোর পুনর্গঠন করা জরুরী। সেই সাথে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের প্রতি আপনার প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে পুরোপুরিভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এসব অনেক কঠিন বিষয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। আশা করি, বইটি পড়া শেষ হতে না হতেই নিজের জীবনকে পরিপাটি করে গড়ে তুলতে নিজস্ব সক্ষমতা ও আগ্রহের সন্ধান পাবেন। অনেকেই আমাকে অভিযোগের সুরে জানান, “আমি জন্মগতভাবেই অগোছালো মানুষ”, ‘আমি এভাবে গুছিয়ে চলতে পারি না’, “আমার পরিপাটি করার মতো সময় নেই” ইত্যাদি। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো, আপনার মাঝের অগোছালো রূপটি বংশগত বিষয় নয়, সময়ের অভাবজনিত কারণেও আপনি অগোছালো নন। জীবনকে পরিপাটি করে তুলতে এমন সব ভুল ধারণা বাদ দিয়ে আমরা এভাবেও ভাবতে পরি
‘একবারের চেষ্টায় মাত্র একটি রুম গুছিয়ে রাখাই ভালো।’ ‘প্রতিদিন সামান্য কিছু হলেও পরিপাটী করে রাখা ভালো।’
‘বাসার বিভিন্ন প্লানের সাথে খাপ খাইয়ে জিনিসপত্রগুলো স্টোর করা যায়।’ ইত্যাদি।
জাপানের মানুষেরা বিশ্বাস করে, আপনি যখন বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন, বাথরুমকেও ঝকঝকে তকতকে করে রাখেন, এর মাধ্যমে আপনি নিজের কাছে সৌভাগ্যকেই ডেকে আনেন। কিন্তু পুরো বাসাই যখন অগোছালো হয়ে পড়ে তখন ওয়াশরুমের দিকে কে আর নজর দেয়, বলুন! ‘ফেং শুই’* চর্চার ক্ষেত্রেও কথাটি সমানভাবে সত্য। প্রিয় নীড়টিকে সুন্দরভাবে সাজালে আসলে কী হয়? পরিপাট্যতার কাজ শেষে খেয়াল করে দেখবেন চারপাশের দ্রব্য-সামগ্রীগুলো, ফার্নিচারগুলো যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে।
নিজের আবাসকে পরিপাটি করে তোলার কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করে থাকলে, এখন আপনার জীবনে একটি নাটকীয় পরিবর্তনের দেখা পেতে অপেক্ষা করুন। নিজের বাসাটিকে সুশৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় প্রত্যক্ষ করলে হৃদয় নেচে ওঠে কিনা? একটি পরিপাটি ছিমছাম নীড়ের দর্শনে নিজের পুরো পৃথিবীকে আলো ঝলমলে বলে মনে হবে। এই দৃশ্য দেখে আপনি আর কখনও অগোছালো জীবন ফিরতে চাইবে না। আমি এটিকে বলি ‘পরিপাট্যতার যাদু’। জীবনে এর প্রভাবও কিন্তু অনেক বিস্ময়কর! এর মাধ্যমে শুধু যে আপনি আপনার জীবনকে পুনরায় অগোছালো রূপে প্রত্যক্ষ করতে অনীহা বোধ করবেন, এমনটা নয়। সেই সাথে নতুন দিকে মোড় নেয়া জীবনের গতিপথকেও চাক্ষুস করতে পারবেন। তাই পরিবর্তনের এই যাদুর কাঠিটির কথা আমি অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই।