চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

কালিলা ও দিমনা (শিক্ষণীয় গল্পের ঝুলি বা বুদ্ধির গল্প)

    কালিলা ও দিমনা: মুসলিম পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতীয় লোককাহিনির বিশ্বজয় ‘কালিলা ও দিমনা’ লেখা হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে ভারতবর্ষের কাশ্মীরে। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ছিল ‘পঞ্চতন্ত্র’ বা পাঁচটি উপদেশ। ‘কালিলা ও দিমনা’ লেখা হয়েছিল তিন তরুণ রাজকুমারের জন্য, যারা তাদের শিক্ষককে হতাশ এবং পিতাকে বিভ্রান্ত করেছিল। রাজা চিন্তিত ছিলেন, যদি সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের হাতে তাঁর রাজ্য কিভাবে তুলে দেবেন! রাজা তাঁর শিক্ষামন্ত্রীর ওপর সমস্যা সমাধানের ভার দিলেন। মন্ত্রী তাদের জন্য পঞ্চতন্ত্র রচনা করলেন, যাতে কল্পিত প্রাণীর ভাষ্যে আড়াল করা হয়েছিল অসাধারণ ব্যাবহারিক জ্ঞান, যেন তা সহজেই আত্মস্থ করা যায়। রচয়িতা ও রচনাকাল: কালিলা ও দিমনার রচয়িতা ও রচনাকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। প্রসিদ্ধ মতানুসারে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে দাবশালিমের নির্দেশে পণ্ডিত বায়দাবা তা রচনা করেছেন। আর অন্য মতানুসারে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ সনে রাজা দেব শর্মার নির্দেশে দার্শনিক বিষ্ণু শর্মা তা রচনা করেন। গবেষকরা মনে করেন দেব শর্মা ও দাবশালিম, বিষ্ণু শর্মা ও বায়দাবা একই ব্যক্তি। পারস্যের পথে: রচনার দুই শ বছর পর পারস্যের একজন শাসক—ধারণা করা হয় তাঁর নাম নওশেরাওয়া (৫৩০-৫৭৮ খ্রি.) তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বুর্জাভিকে ভারতে পাঠান একটি ভেষজ খুঁজতে। গুজব উঠেছিল, যে তা ধারণ করবে সে অনন্ত জীবন লাভ করবে। বুর্জাভি ভেষজের পরিবর্তে পঞ্চতন্ত্রের একটি অনুলিপি নিয়ে দেশে ফিরলেন। অসাধারণ জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়ায় তিনি ‘কালিলা ও দিমনা’র নাম দিয়েছিলেন ‘অলৌকিক ওষুধ’। বাদশাহ বুর্জাভিকে প্রাচীন ফার্সি ভাষার প্রাচীনরূপ ‘পাহলভি’তে ভাষান্তরের নির্দেশ দেন। বাদশাহ বিষয়টিকে এত পছন্দ করলেন যে নিজের বিশেষ কক্ষে তা সজ্জিত করে রাখলেন। অষ্টম শতকের মুসলিম চিন্তাবিদ ও বইটির আরবি অনুবাদক আবদুল্লাহ ইবনে মুকাফফা বলেন, ‘রাজকুমারদের হৃদয়ে সাড়া জাগাতে, তাদের আনন্দ দিতে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা প্রদান করতে বইটিতে বিভিন্ন প্রাণীর রংবেরঙের ছবি যুক্ত করা হয়েছিল।’ আরবে জয়যাত্রা: এর তিন শ বছর পর মুসলিমরা পারস্য জয় করে। তখন ইবনে মুকাফফা বুর্জাভির অনূদিত পাহলভি পঞ্চতন্ত্রের আরবি করেন। অনিন্দ্যসুন্দর আরবি গদ্যরীতি অনুসরণ করেন, যাকে এখনো আরবি গদ্যের আদর্শ রীতি মনে করা হয়। ইবনে মুকাফফা পঞ্চতন্ত্রের নতুন নাম দেন ‘কালিলা ও দিমনা’। জ্ঞান, রসবোধ ও অসাধারণ আরবি গদ্যশৈলীর কারণেএটি সর্বশ্রেণির পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং মুসলিম লোকসাহিত্যে স্থান করে নেয়। আরবদের হাত ধরে বিশ্বজয়: বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কালিলা ও দিমনার যে সংস্করণ পাওয়া যায় তা মূলত ইবনে মুকাফফা অনূদিত আরবি থেকে গৃহীত। মুসলিমরা কালিলা ও দিমনার স্প্যানিশ অনুবাদ করে এবং পরবর্তী সময়ে স্প্যানিশ থেকে ইউরোপের অন্যান্য ভাষায় তা অনূদিত হয়। ইতালিতে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর প্রথম মুদ্রিত বইগুলোর অন্যতম কালিলা ও দিমনা। কী আছে কালিলা ও দিমনাতে: কালিলা ও দিমনার প্রধান চরিত্র দুটি শিয়াল। তাদের আলাপচারিতায় রাষ্ট্র ও প্রশাসন বিষয়ক নানা দিক বিবৃত হয়েছে বইটিতে। বইটির উপস্থাপন ভঙ্গি খুব রসাত্মক ও উপভোগ্য। ইবনে মুকাফফার অনবদ্য আরবি গদ্য প্রাচীন এ সাহিত্যকর্মকে অমরত্ব দিয়েছে। কালিলা ও দিমনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা যেমন বুদ্ধিদীপ্ত, তেমনি তা অশ্লীলতামুক্ত। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে মুসলিম বিশ্বে তার বিশেষ মূল্যায়ন হয়। খ্যাতিমান আরব সাহিত্যিক ফাতেমা আল-জাহরা হাসসান বলেন, ‘এখনো কালিলা ও দিমনার যেকোনো পাঠক আবিষ্কার করবে আমাদের সমাজ ও আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে বইটির জ্ঞান ও অর্থবোধকতাকে মিলিয়ে নেওয়া প্রাসঙ্গিক। এশিয়ায় জন্ম নেওয়া লোককাহিনি, যা পৃথিবীর চতুর্দিকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।’ বাংলা ভাষায়: অমর সাহিত্য কালিলা ও দিমনা বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। লেখক ও গবেষক গোলাম সামদানী কোরাইশী বইটির ফার্সি অনুবাদ ‘আনওয়ারে সুহাইলি’ থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেন, যা ১৯৬৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে বাজারে কালিলা ও দিমনার আরো অনেকগুলো অনুবাদ পাওয়া যায়। নিচে কালিলা ও দিমনার বিখ্যাত কিছু উক্তি দেয়া হল: ● শিষ্টতার শিখরে উড্ডয়ন বড় কঠিন, কিন্তু সেখান থেকে অধঃপতন খুব সহজ। একটি ভারী পাথরকে কাঁধে তোলা কঠিন, কিন্তু ফেলে দেয়া সহজ। ● দুনিয়াটা লবণাক্ত পানির মতো, যতই পান করবে ততই তৃষ্ণা বাড়বে। ● চারটি জিনিসের মাঝে কখনো মিশ্রণ ঘটে না; দিন-রাত, পাপ-পুণ্য, আলো-আঁধার এবং ভালো-মন্দ। ● পানি যতই আগুনে গরম করো, তা আগুনকে এক নিমিশেই নিভিয়ে দেবে। ● যে বাক্যটা তুমি এখনো বলোনি, তুমি সে বাক্যের মালিক, যে বাক্যটি বলে ফেলেছো তুমি সে বাক্যটির দাস। ● প্রতিটি দহনেরই একটি দমন আছে; আগুনের জন্য যেমন পানি, বিষের জন্য দাওয়া, দুঃখের জন্য ধৈর্য, এশকের জন্য বিচ্ছেদ কিন্তু হিংসানামক দহনের কোনো দমন নেই। ● মানুষ নিজেকে ভালোবাসে তাই সে বেঁচে থাকতে চায়। আর অন্যকে ভালোবাসে কারণ সে নিজের জীবনকে আনন্দিত করতে চায়। তথ্যসূত্র : ১০০১ইনভেনশন ডটকম
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
t

এই লেখকের আরো বই