চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

আল-কারনাক

    আধুনিক আরবি উপন্যাসের সূচনা হুসাইন হাইকাল রচিত ‘জয়নাব’-এর মাধ্যমে। এরপর নিরীক্ষাপ্রবণ ত্বাহা হোসাইন, শিল্পবোদ্ধা আব্বাস মাহমুদ আল আক্কাদ এবং নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক তাওফিক আল-হাকিম প্রমুখ এ ধারায় যা নির্মাণ করেন, তা শিল্পনৈপুণ্যের বিচারে অবশ্যই উত্তীর্ণ। কিন্তু এঁদের কারো কারো রচনায় ভাষা-জৌলুসের আবরণে বিষয়-চয়ন, কাহিনি-বিন্যাস ও উপস্থাপনায় যে গতানুগতিকতা ছিল, তা কেটে যায় নাগিব মাহফুজের প্রখর শিল্প-দক্ষতায়। মাহফুজের জন্ম মিশরের এক দূর পল্লিতে। নিজ অঞ্চলে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের পর কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সমাপ্ত করেন। এখানে সুযোগ ঘটে পারিবারিকভাবে প্রাপ্ত ধর্ম-দর্শনের সঙ্গে পশ্চিমাগত দর্শনের তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণের। এজন্যই ইসলাম-পূর্ব মিশরীয় ঐতিহ্য, ইসলাম-পরবর্তী আধ্যাত্মিক চর্চা এবং সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির নির্যাস শিল্পরূপ হয়ে ধরা দেয় তাঁর লেখায়। অবশ্য প্রথমজীবনে তিনি উপন্যাস রচনা করেন মিশরীয় ইতিহাসকে আশ্রয় করেই, যাকে বলা যায় ঐতিহাসিক রোমান্স। কিন্তু কাঠামোগত বিন্যাস ও বিষয়ে অভিনবত্ব সৃষ্টির তাগিদে তিনি এ পথ ত্যাগ করেন খুব দ্রুত। বাস্তববাদের প্রয়োগে অসাধারণ কুশলতায় আরবীয় উপন্যাসে সংযোজন করেন ভিন্ন এক মাত্রা। স্থানিক ঘটনার বৈশ্বিক রূপদানের এ দক্ষতায় বিশ্বসাহিত্যাঙ্গনে তাঁর উপস্থিতি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আঙ্গিকের দিক থেকে তাঁর উপন্যাস পশ্চিমা ধাঁচের হলেও বিষয়বস্তু নির্বাচনে তাঁর ভেতরে কাজ করেছে গভীর ঐতিহ্যমুখিতা। এরপর জীবন-ব্যবস্থার চিত্রায়ণে তাঁর এই কৌশলই এগিয়ে যায় সমকালীন অন্যান্য সাহিত্যিক মতবাদকে আত্মস্থ করে। বাস্তবতাভিত্তিক উপন্যাসে তিনি কায়রো নগরীর আব্বাসিয়া সড়ককে প্রতীক হিসেবে বেছে নেন। কিশতমার, মিরামার, মিদাক গলি, নতুন কায়রো, খান আল-খালিলি, সুক্কারিয়া সড়ক, আদিহীন-অন্তহীন প্রভৃতি গ্রন্থে মিশরের সামাজিক, রাজনীতিক, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বিষয় শৈল্পিক দলিল হিসেবে উঠে আসে। উপন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য গল্প রচনা করেন। গল্পগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় চৌদ্দ, উপন্যাসের সংখ্যা তেত্রিশ। তাঁর একাধিক উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত। মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনায় রচিত বিস্তৃত পরিসরের উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ক্ষুদ্র উপন্যাসের মাধ্যমে কোনো কোনো ঘটনাকে দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসেন। আল-কারনাক সেই সাময়িক কাহিনি নিয়েই লেখা। ১৯৫২ সালে মিশরের জাতীয় বিপ্লবের কারণে তরুণহৃদয়ে বিপুল প্রত্যাশার উদ্ভব হয়। রাজনৈতিক শক্তির সহিংসতা এবং পরিবর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে নির্মমতার যে দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তারই সাহিত্যিক আলেখ্য এই উপন্যাস। আল-কারনাক এখন মিশরে উৎপাদিত একরকম কার্পাসতুলার নাম। কিন্তু মূলত তা একটি ফারাও-নির্মিত প্রাচীন নগরীর নাম, যা বর্তমানে নীলনদের পূর্ব দিকে অবস্থিত।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
নাগিব মাহফুজ(আরবি: نجيب محفوظ‎‎) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়রো ট্রিলজি তাকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।

নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার কঠোর ইসলামি অনুশাসন মেনে চলত। তিঁনি একজন লেখক হবেন তা কল্পনাতেও ভাবেন নি।" মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার উপর একটি বড় প্রভাব পরে। ব্রিটিশ সৈন্যদের তিনি খুব কাছ থেকে প্রায়ই বিক্ষোভকারী ঈমানদার নারী ও পুরুষদের উপর অগ্নিসংযোগ করতে দেখেন। তার প্রথম দিকের বছর গুলোতে, মাহফুজ নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক ও হাফিজ নাজিব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষণা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন।

এই লেখকের আরো বই