অং সান সু চি
অং সান সু চি ১৯৪৫ সালের ১৯শে জুন ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন) জন্মগ্রহণ করেন। পিটার পপহ্যামের বর্ণনানুসারে, তিনি রেঙ্গুনের বাইরে হামওয়ে সাউং নামক একটি ছোট গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবা অং সান সেসময় আধুনিক বর্মী সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং আলাপ-আলোচনা করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের থেকে বার্মাকে স্বাধীন করেন; কিন্তু ঐ বছরই তিনি বিপক্ষদের গুপ্তহত্যার শিকার হন। একজন বর্মী রাজনীতিক, কূটনীতিক, এবং লেখিকা যিনি মায়ানমারের প্রথম ও বর্তমান রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী। মায়ানমারের ডি ফ্যাক্টো তথা অনানুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবেই তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত। এছাড়াও প্রথম নারী হিসেবে তিনি মায়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মন্ত্রী, বিদ্যুৎশক্তি ও ক্ষমতা বিষয়ক মন্ত্রী, এবং শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট টিন চাঅয়ের কেবিনেটে কাজ করেন; আর ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মায়ানমারের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস তথা নিম্নকক্ষে কৌমু টাউনশিপের এমপি ছিলেন। আধুনিক মায়ানমারের জাতির জনক অং সান এবং খিন চির কন্যা সু চির জন্ম হয় ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে। ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৬৮-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করার পর তিনি জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৭২ সালে মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই ছেলে হয়। ১৯৮৮-র গণআন্দোলনের সময় সু চি সবার নজর কাড়েন এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সাধারণ সম্পাদক হন; সেসময় সদ্যগঠিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামরিক জান্তার বিরোধী অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সু চিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়; ততদিনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেছেন। সু চির দল ২০১০ সালের নির্বাচন বয়কট করে, যা সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় এনে দেয়। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অব দি ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে; যদিও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকটোরাল কলেজে তাদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের জন্য ৬৭% সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট ছিল। সু চির প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান। গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত। লুক বেসনের দ্য লেডি (২০১১) চলচ্চিত্রে সু চি ও তার স্বামী মাইকেল অ্যারিসের জীবনকাহিনী দেখানো হয়েছে এবং তাদের দুজনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিচেল ইয়ো এবং ডেভিড টুলেস। ২০১১র নভেম্বরে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবার আগে ইয়ো সু চির সাথে দেখা করেন। জন বুরম্যানের বিয়ন্ড রেঙ্গুন (১৯৯৫) চলচ্চিত্রে সু চির চরিত্রে অভিনয় করেন অ্যাডেল লাট্জ। ২০০৯ সাল থেকে, ভারতীয় অভিনেত্রী এবং ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পী রুক্ষ্মিণী বিজয়াকুমার দ্য লেডী অপ বার্মা নামক একাঙ্কিকা নাটকে সু চির চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন; নাট্য-পরিচালক হলেন প্রকাশ বেলোয়াড়ি, এবং রচয়িতা রিচার্ড শ্যানন। ইউটু-এর বোনো সু চির প্রতি ট্রিবিউট হিসেবে “ওয়াক অন” গানটি লেখেন এবং ২০০৯-১১ ইউটু থ্রিসিক্সটি ডিগ্রি ট্যুরে (U2 360� Tour) তার অভিযাত্রা প্রচার করেন। স্যাক্সোফোন-বাদক ওয়েইন শর্টার “অং সান সু চি” শিরোনামে একটি গান সুর করেছেন। তার অ্যালবাম ওয়ান প্লাস ওয়ান (1 1)-এ গানটি প্রকাশিত হয় (সাথে ছিলেন পিয়ানোবাদক হেরবি হ্যানকক এবং ফুটপ্রিন্টস লাইভ)।