আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর:
কথা সাহিত্যিক আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার মোবারকপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মৌলভী কেরামত আলী গাজী, মাতা মরহুমা আইমানী বিবি। পিতা সামান্য লেখাপড়া জানলেও মা ছিলেন নিরক্ষর গৃহিনী। তার পরও লেখাপড়ার প্রতি তাদের ছিল সীমাহীন ঝোঁক। প্রচন্ড শিক্ষানুরাগী হওয়ার কারনে সন্তান দের লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। চার ভাই এক বোনের মধ্যে আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীল ছিলেন সবার ছোট।
আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর রাজগঞ্জ বহুমুখী বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে যশোর সরকারি এম, এম, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন এবং মেডিকেলে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে চিকিৎসা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি কেশবপুর উপজেলার সাতবড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ ও পরিবার কল্যাণে কেন্দ্রে উপসহ কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। নিজ কমর্স্থল এলাকায় এত বেশি জনপ্রিয় ছিলেন যে চাকুরি জীবনের প্রায় সারাটি সময় তিনি সাতবাড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে কাটিয়েছেন।নিজ কমর্স্থল এলাকায় এত বেশী জনপ্রিয় ছিলেন যে চাকুরী জীবণের প্রায় সারাটি সময় তিনি সাতবাড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে কাটিয়েছেন। একবার তাকে বদলী করা হয়েছিল তখন এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বণীতা এক যোগে আন্দোলন করে এবং সরকারের উপর মহলে দেনদরবার করে মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছিল।
আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীরের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭। উল্লেখযোগ্যগ্রন্থ হলো, চলার পথে, মৃত্যুর সমুদ্র শেষ, গল্পে মধুসূদন, একটু গেলে বুনোপথ, রেখ মা দাসেরে মনে, রজনীগন্ধা বনে ঝড়, নিষিদ্ধ সৌরভ, বিনষ্ট সংলাপ, চির জনম হে, মাধুরী, শঙ্খচুড়, শাওন, নির্বাচিত গল্প (কলিকাতা), তোমাকে ভালবেসে (কলিকাতা), ডহুরী, এস,এম, সুলতান সচল সবাক ইতিহাস, এস,এম,সুলতান ঃ কর্ম ও জীবন ব্রাত্যজন, (প্রথম উপন্যাস), প্রান্তজন, মারিয়া, লোকজন, কপোতাক্ষী, শেষকৃত্য, সুন্দর বনের লোকজীবন, সুন্দরবনের ক্ষুদ্র নৃ, অযাচিত। তার সম্পাদিত পত্রিকা: ক্ষণিক, স্মৃতি, আগন্তক, শিল্প-সাহিত্য, মেডিক্যাল জার্নল (কুষ্টিয়া)। সম্পাদিত গ্রন্থ: শিল্পী রফিক হুসাইন বিরচিত- বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের ইতিহাস। অনুদিত গ্রন্থ (ঝষবপঃরাব হড়াবষ ড়ভ অইটখ ঐঙঝঝঅটঘ ঔঅঐঅঘএওজ) এসব সাহিত্য রচনায় কৃতিত্বের জন্য তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কিৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন। লাভ করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও সন্মাননা। ২০০৮ সালে রাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ তাকে সংবর্ধনা প্রদান করে। একই বছর রাজগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় তাকে গণসংবর্ধনা প্রদান করে। ২০০৯ সালে মধুসূদন পাবলিক লাইব্রেরী তাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। ২০১০ সালে মণিরাপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে বই মেলার অনুষ্ঠানে মণিরামপুর শিল্পী গোষ্ঠী তাকে সন্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া অনান্য পুরস্কার ও সম্মননার মধ্যে রয়েছে, ব্র্যাক ট্রাস্ট কিশোরী ক্লাব মোবারকপুর, রংধনু সাহিত্য পুরস্কার ডুমুরিয়া খুলনা, সুজন সম্মানানা মণিরামপুর, জীবনান্দ দাস সম্মাননা কলিকাতা, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা, ধান সিঁড়ি সম্মননা, ঢাকা। এছাড়াও লেখক তার রাজগঞ্জের নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার। সেখানে অসংখ্যা বই এবং পত্র পত্রিকা আছে। প্রতি বছর ২১ ফেব্র“য়ারি গ্রন্থাগারের সামনে বসে দিন ব্যাপী বই মেলা।
কথা সাহিত্যিক আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর ১৯২১ সালের ৩০ জুন মৃত্যুবরণ করেন।