চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

চেপে রাখা ইতিহাস

    লেখক শুরুতেই ঢিল ছুঁড়েছেন সেই খালে, যেখান থেকে ভেসে আসে “মুসলিমরা ভারতবর্ষে বিদেশী” স্তুতি মালা। লেখকের প্রশ্ন, মুসলিমরা বিদেশী হলে আর্যরা কী? যদিও লেখক বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি দিয়ে এটা প্রমাণ করেছেন যে মুসলিমরা ক্ষমতায় ১৩শ শতকে আরোহন করলেও ভারতবর্ষে তাঁদের বসবাস ৮ম শতক থেকে। লেখক উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ব্রাহ্মধর্মের নেতা আচার্য কেশব সেন, পরিব্রাজক ব্যারিস্টার চন্দ্রশেখর সেন, মানবেন্দ্র রায়, ড. তেজ বাহাদুর সাপ্রু, গুরু নানক, জওহরলাল নেহেরু, মাহাত্মা গান্ধী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ হতে। বইটাতে ভারতবর্ষে মুসলিম জাতির মূল্যায়নও করেছেন ঐতিহাসিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই। লেখক ভারতবাসীর সামনে উন্মুক্ত করেছেন মুসলিম বিশ্বের আশ্চর্য সব রত্নাবলী। চমকের কমতি নাই বইটাতে, যেমন একটা তথ্য, গান্ধীজি এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একই বংশের। লেখক একই সাথে তুলে এনেছেন হিন্দু ধর্মের কৌলিন্য প্রথার অন্ধকার দিকটাও, যেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে কন্যাদায়গ্রস্ত বাবাকে হেনস্থা করা হতো। ১ম অধ্যায় জুড়ে আছে ভারতবর্ষে তাঁদের মুসলিমদের গোড়ার ইতিহাস এবং তখন হিন্দু এবং ব্রাহ্মণদের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক কেমন ছিলো তা নিয়ে। ২য় অধ্যায় জুড়ে আছে আধুনিক ইতিহাসে আমরা যেসব মুসলিম আগন্তুকদের ডাকাত এবং লুটেরা হিসেবে জানি তাঁদের নিয়ে। যেমন, মুহাম্মদ বিন কাসিম, সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মদ বিন তুঘলক ইত্যাদি। সবচেয়ে তথ্যবহুল এবং আলোচনা লব্ধ দুইটি বিষয় হল মুঘল সম্রাজ্য এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে। লেখক সমস্ত মুঘল সম্রাটদের আসলিয়াৎ বের করে এনেছেন এবং মহান আকবরের আসল বাস্তবতাও নিরূপণ করেছেন৷ এসব ছাড়াও আরও অনেক চাপা পড়া তথ্যের হদিস আছে বইটাতে৷ আমি জানিনা কেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুসলমানদের ঠাঁই দেওয়া হয়নি। ঐতিহাসিকতার দিক থেকে মুসলিম চরিত্রের উপর যত কালিমা লেপন করা হয়েছে, লেখক তা অনেকাংশেই মুছে দিতে সক্ষম হয়েছেন৷ কিন্তু কেউ যদি দেখেও না দেখার ভান করে থাকে তো সেটা ভিন্ন কথা। তবে মজার ব্যাপার হল লেখক এসব নিজে না লিখে হিন্দু এবং অমুসলিম ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যাতে বইটি স্রেফ যে মুসলমানদের পক্ষে ওকালতি এই দোষে দুষ্ট না হয়। বইটা পড়বার পরে একটু একটু বুঝে আসছে, বর্তমানে ভারতে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদের আস্ফালন তার বীজ কবে আর কোথায় বপিত হয়েছিলো। আফসোসের সাথে বলতে হয় যে মারাঠা দস্যুদের অত্যাচারে বাংলার হিন্দু-মুসলিম তটস্থ ছিলো, যেই বর্গীদের বিরুদ্ধে নবাব অলিবর্দী এবং সিরাজুদ্দৌলা লড়াই করে গেছেন, সেই দস্যু শিবাজীকে ভারতে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়, শুধুমাত্র মুসলিম বিদ্বেষী হবার কারণে। অথচ, আরেক মারাঠা মহাবীর শম্ভূজীর মূল্যায়ন প্রায় নেই বললেই চলে, শম্ভূজিও মুঘলদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিলেন বটে, কিন্তু একজন বীরের মতো লড়েছিলেন, শঠতা বা কপটতা দিয়ে কাজ হাসিল করতে চাননি কখনো। আরো অনেক বিষয়ই বইটাতে তুলে এনেছেন লেখক যেসব হয় চাপা দেওয়া অথবা বিকৃত করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম, রবীন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কিংবা রামমোহন, ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের আসল অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সর্বোপরি আমি মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা প্রিয়া সাহা কাণ্ডের পরে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবাত আগেই হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষিত সমাজের উচিৎ বইটা পড়া। এমন ভাবার কোনো কারণ নাই যে ভারতবর্ষে মুসলিমেরা সংখ্যালঘু হওয়ার পরেও মুসলমানদেরই সব কৃতিত্ব, এমনটা নয়। আসলে বলা উচিত, প্রচলিত ইতিহাসে হিন্দুধর্মের চরিত্রগুলো যেভাবে পাওয়া যায়, মুসলিম চরিত্রগুলো অতো সহজে পাওয়া যায়না৷
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা
ইতিহাসবিদ আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা: ইনি হলেন সেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মহান ব্যাক্তি গোলাম আহমদ মোর্তাজা যার বই এবং তাকরিরের মাধ্যমে মানুষ হাজারো ইতিহাস জানতে পেরেছে। গোলাম আহমাদ মোর্তজা জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের'র বর্ধমান জেলার মেমারিতে। তিনি একজন বক্তা,গবেষক ও লেখক। তিনি দুই বাংলার অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন পলাশীর যুদ্ধ,অন্ধকূপ হত্যাকান্ড, মহামতি আকবরের কথা এমনি অনেক নতুন তথ্য তিনি প্রমাণসহ পেশ করেন। যা আসলে আমরা যেভাবে জানি সেভাবে বলা হয়নি। তাঁর পুস্তক পাঠে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে যায় পাঠক, কিন্তু গোলাম আহমাদ মোর্তজা এমনভাবে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। তাতে তাকে মেনে নিতে হয়েছে ভারতের বর্তমান ঐতিহাসিকদের। বিখ্যাত ইতিহাসবিদরা তার তথ্য মেনে নিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন। ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দেন যা চাপা পরে ছিলো ইতিহাসের পাতায়। তিনি সেগুলোকে সামনে তুলে আনার চেষ্টা করেন। তাকে নিয়ে এ পর্যন্ত ভারতে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তিনি বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং পশ্চিমবঙ্গে তিনি "বক্তা সম্রাট' নামে পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর কয়েকটি ইতিহাসের বই ও ইতিহাস ভিত্তিক বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে। ইতিহাসের ইতিহাস, চেপেরাখা ইতিহাস,বাজেয়াপ্ত ইতিহাস,পুস্তক সম্রাটসহ অনন্য ইতিহাসের বইয়ের মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন। ভারতের গতানুগতিক ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকগুলোতে মুসলিমদের নিয়ে লিখিত বিভিন্ন তথ্য তিনি বানোয়াট দাবী করেন। সেই তথ্যগুলোর বিরোধীতা করেন এবং সেগুলো মিথ্যা তথ্য তিনি প্রমাণসহকারে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন এই গ্রন্থ গুলোতে। পাশাপাশি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ,গান্ধীজি, রাজা রামমোহন রায়,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,দেবেন্দ্ররনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে সমালোচনা করেন এবং তাদের চাপা পরা ইতিহাস সামনে তুলে এনে প্রমাণসহকারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের সরকার ১৯৮১ সালে তাঁর একটি গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেন। এরপর তিনি একেরপর এক ইতিহাসের বই প্রকাশ করতে থাকেন,যার সিংহভাগ বই'ই সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের সরকার বাতিল করেন। তাঁর উপর সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনায় গোলাম আহমাদ মোর্তজা তাঁর "বাজেয়াপ্ত ইতিহাস" গ্রন্থে এর প্রতিবাদ করেন। আল্লাহ তায়ালা হযরতের নেক হায়াত দারাজ করেন এবং মানুষের সামনে বই আকারে হোক অথবা ওয়াজ, বক্তৃতা মাধ্যমে হোক সত্যকে উন্মেচন করার তৌফিক দান করুন।

এই লেখকের আরো বই