চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

রক্তেভেজা একাত্তর

    মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে মেজর হাফিজ যশোর সেনানিবাসে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি ব্যাটালিয়নকে নিয়ে সেনানিবাস থেকে পালিয়ে নিরাপদ এলাকায় আসেন এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দেন। বাকি নয় মাস তিনি যুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। কামালপুর যুদ্ধ, আটগ্রাম যুদ্ধ, সিলেট দখলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মেজর হাফিজ যুদ্ধকালে আহতও হয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালেই বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে একাধিকবার খেতাব প্রদানের সুপারিশ করা হয় এবং যুদ্ধ শেষে তিনি ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৯৭ সালে মেজর হাফিজ তাঁর যুদ্ধের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে রক্তেভেজা একাত্তর গ্রন্থটি রচনা করেন। মেজর হাফিজ যুদ্ধের শুরুতে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন পদবিতে কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন এবং যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গেই ছিলেন। এ কারণে গ্রন্থটিকে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আংশিক ‘ওয়ার ডায়েরি’ও বলা চলে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালে মেজর হাফিজ যেসব যুদ্ধ ও খণ্ডযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, গ্রন্থে তার বর্ণনা আছে। যুদ্ধের বর্ণনা আত্মস্থ করার জন্য যুদ্ধ এলাকাসমূহের বেশ কয়েকটি স্কেচ বা নকশা তিনি গ্রন্থে ব্যবহার করেছেন। যুদ্ধে মেজর হাফিজ তাঁর ভূমিকা বর্ণনা করার পাশাপাশি অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক অফিসার এবং জেসিওদের কর্মকাণ্ডও বর্ণনা করেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে সাধারণ সৈনিক এবং গণমানুষের কৃতিত্বও উল্লেখ করেছেন। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান বেনু, কিশোর তোতা মিয়া বা চা-শ্রমিক হরিও তাঁর গ্রন্থে নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের মতো সমান গুরুত্ব পেয়েছে।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম:

হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৩৯) হলেন একজন বাংলাদেশী সামরিক ব্যক্তিত্ব, সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জন্ম ও ব্যক্তিগত:
হাফিজ উদ্দিন আহম্মদের জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৩৯ সালে পৈতৃক বাড়ি ভোলার লালমোহনে। তার বাবার নাম আজহার উদ্দিন আহম্মদ এবং মায়ের নাম করিমুন্নেছা। তার স্ত্রীর নাম দিলারা হাফিজ। তাদের এক মেয়ে, দুই ছেলে।

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন:
হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ পড়াশোনা শেষ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৬৮ সালে কমিশন পান এবং প্রথম কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ফুটবলের প্রতি ছিল তার যথেষ্ট আগ্রহ ছিলো। ১৯৭১ সালের মার্চে হাফিজ উদ্দিন তার ইউনিটের সঙ্গে যশোরের প্রত্যন্ত এলাকা জগদীশপুরে শীতকালীন প্রশিক্ষণে ছিলেন। ২৫ মার্চের পর তাদের ডেকে পাঠানো হয় এবং ২৯ মার্চ তারা সেনানিবাসে ফেরেন। পরে যোগ দেন যুদ্ধে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষ করে ভারতে যান। তিনি কামালপুর, ধলই বিওপি, কানাইঘাট ও সিলেটের এমসি কলেজের যুদ্ধে বেশ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই কর্মরত ছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসন থেক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ দলনেতা হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি যুদ্ধ হচ্ছে জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুরের যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই কামালপুরে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। কামালপুর বিওপিতে ভোর সাড়ে তিনটার সময় বি ও ডি দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আক্রমণ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। দুটি কোম্পানির মধ্যে বি কোম্পানির কমান্ডার ছিলাম তিনি। ডি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন সালাহউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম)। সে সময়ে মাহবুবুর রহমানের (বীর উত্তম) নেতৃত্বে ‘এ’ কোম্পানিকে পাঠানো হয় উঠানিপাড়ায় কাটঅফ পার্টিতে যোগ দিতে। তবে বি ও ডি কোম্পানি এফইউপিতে পৌঁছানোর আগেই আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে যায় যা এ দুটি কোম্পানি এফইউপিতে পৌঁছার পর শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে মুক্তিযোদ্ধারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন আর তখনই পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর্টিলারি ও ভারী মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর। পরবর্তীতে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও সালাহউদ্দিন আমাদের দলের মুক্তিযোদ্ধাদের একত্র করে শত্রুদের আক্রমণ শুরু করেন। তুমুল আক্রমণে শত্রুরা পেছনে হটে যায়। তখনও শত্রুরা পেছনে অবস্থান নিয়ে আর্টিলারি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। শত্রুর গোলাগুলিতে সালাহউদ্দিন মমতাজ শহীদ হন। একটু পর মর্টারের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ। এতে করে দুই কোম্পানীই নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়ে। 

পুরস্কার ও সম্মাননা:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূষিত করেছে।

এই লেখকের আরো বই