চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

চিরায়ত বিভূতিভূষণ প্যাকেজ

    চাঁদের পাহাড়:- বাঙালীর ছেলে শঙ্কর, পাকা খেলোয়াড়, নামজাদা বক্সার, ওস্তাদ সাঁতারু এফ্—এ পাশ করে সুবোধ ছেলের মতো কাজকর্মের সন্ধান করল না, দেশান্তরের হাতছানি পেয়ে সে পাড়ি দিল সুদূর পূর্ব—আফ্রিকায়। ইউগাণ্ডা রেলওয়ের নতুন লাইন তৈরি হচ্ছিল চাকরি পেয়ে গেল। ডিয়াগো আলভারেজ নামে দুর্ধর্ষ এক পর্তুগীজ ভাগ্যান্বেষীর সঙ্গে হঠাৎ সেখানে তার দেখা। শঙ্কর এই দুঃসাহসী ভাগ্যান্বেষীর সঙ্গ ধরে মহাদুর্গম রিখটারস্ভেন্ড পর্বতে অজ্ঞাত এক হীরের খনির সন্ধানে চলে গেল । ডিঙ্গোনেক বা বুনিপ নামে অতিকায় এবং অতিক্রূর এক দানব—জন্তু সেই হীরের খনি আগলিয়ে থাকত। পর্যটকেরা যার নাম দিয়েছেন চাঁদের পাহাড় সেই রিখটারস্ভেন্ড পর্বতে গিয়ে জীবনমৃত্যু নিয়ে শঙ্করকে যে রোমাঞ্চকর ছিনিমিনি খেলতে হল তার আশ্চর্য বিবরণ যে—কোনো বয়সের কল্পনাকে উত্তেজিত করবে। বিখ্যাত ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতা অনুসরণে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক সংস্থান এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যাদির যথাযথ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক এবং গল্পের পাশাপাশি হুবহু আফ্রিকান পরিবেশের যে—সব নিপুণ ছবি আঁকা হয়েছে তা বাংলা বইয়ের জগতে আদর্শ স্থানীয়। বিভূতিভূষণের হাতে তরুণদের জন্য লেখা এ—বই ক্ল্যাসিক হিসেবে পরিগণিত হবার যোগ্য। আরণ্যক:- বিভূতিভূষণের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রচনা। মূল বাংলা ছাড়াও আরণ্যক সাহিত্য আকাদেমির প্রচেষ্টায় ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত করা হয়েছে। যেমন— ওড়িয়া, তেলুগু, গুজরাটি, মারাঠী, মালয়ালম, পাঞ্জাবী এবং হিন্দি। উপন্যাসের নায়ক হলেন সত্যচরণ একজন তরুণ যুবক, যাকে কাজের সন্ধানে কলকাতার বহু জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়। একসময় সে জঙ্গলে একটি চাকরি পেয়ে যায়। সে তথাকথিত সভ্যজগতের সাথে বনের সেতুবন্ধন। এই চরিত্রটির উপস্থিতি ছাড়া গল্পে না বলা দুই জগতের তুলনা, যা প্রায় উপন্যাসটির প্রতি জায়গায় লুকানো ছিল তা সম্ভব হত না। সত্যচরণ এই উপন্যাসটির অন্যতম প্রধান চরিত্র। যদিও তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র মনে করাটা অনেক বড় ভুল হবে। সে একজন বহিরাগত, যার সাথে জঙ্গল অথবা জঙ্গলের লোকদের কোন সম্পর্ক নেই। জঙ্গলের রহস্যভরা মঞ্চে প্রতিদিন মঞ্চায়িত হওয়া নাটকের সে শুধুমাত্র একজন দর্শক। সে শুধুমাত্র বাইরে থেকে এই নাট্যাভিনয় দেখতে পারে, কিন্তু এতে যোগ দেওয়ার সক্ষমতা তার নেই। মূলত ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে কোন কেন্দ্রীয় চরিত্র নেই। জঙ্গলই হলো এর কেন্দ্রীয় চরিত্র, যা প্রতিক্ষেত্রেই নিজের সৌন্দর্য এবং এর মধ্যে লোকজনের জীবনাচার দ্বারা নিজের পরিচয় দেয়। সত্যচরণ এই সবকিছুর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। তার প্রখর মেধা ও অনুভূতি দ্বারা সে যা কিছু দেখে তা বুঝতে ও উপভোগ করতে পারে, কিন্তু সে এসব কিছুর সাথে মিশে যেতে পারেনা। কারণ সে একজন আগন্তুক, জঙ্গলে তার কোন স্থান নেই। আদর্শ হিন্দু হোটেল:- ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ (অক্টোবর, ১৯৪০) রাণাঘাটে হোটেল—পরিচালনার অতিজাগ্রত ব্যবসায়বুদ্ধির একটি সরস ও উপভোগ্য চিত্র ইহাতে আঁকা হইয়াছে। কিন্তু এই নাগরিক চাতুর্য ও কারবারি মারপেঁচ বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে লেখক যে সরল, দেবতা—ব্রাহ্মণে ভক্তিপরায়ণ, ঘন বাঁশবন ও আগাছার জঙ্গলের আড়ালে অযত্নবিকশিত বন্য কুসুমের ন্যায় মৃদুসৌরভপূর্ণ পল্লীজীবনের সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত দিয়াছেন তাহাতেই তাঁহার নিজেরও স্বাভাবিক রুচি ও পাঠকেরও সমধিক তৃপ্তি। হাজারি ঠাকুরের চরিত্রটি চিত্তাকর্ষক, কিন্তু তাহার অদৃষ্টে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে দৈবের যে প্রসাদ—পরম্পরা পুঞ্জীভূত হইয়াছে, যেরূপ একটানা সৌভাগ্যের স্রোতে, চারিদিক হইতে প্রবাহিত অনুকূল বায়ূর প্রেরণায়, তাহার জীবনতরী সাফল্যের বন্দরে ভিড়িয়াছে তাহা বাস্তব প্রতিবেশ অপেক্ষা রূপকথার সহিতই অধিক সাদৃশ্যবিশিষ্ট। উপন্যাসটি মোটের উপর রূপকথার লক্ষণান্বিত; এবং বোধ হয় আধুনিক যুগের সমস্যাক্ষুব্ধ জীবনযাত্রার বৈপরীত্য সূচনার জন্য মিষ্ট।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
t

এই লেখকের আরো বই