চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

আল- কুরআন: শব্দ সংখ্যা ও তার অভিধান ( ১ম ও ২য় খন্ড)

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম- মুখবন্ধ: আল-হামদুলিল্লাহ। ২০১৬ সালে আল-কুরআনের শব্দ সংখ্যা ও তার শিক্ষা নিয়ে বাংলা ভাষায় ৪১৬ পৃষ্ঠার প্রথম গবেষণামূলক গ্রন্থটি প্রকাশ পেলে এটি সূধী পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। পৃথিবীতে কুরআনের উপর এ ধরণের কোন গ্রন্থ প্রকাশ পায়নি বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ কুরআন একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। তার বাহক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছিলেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ।(২১:১০৭)। তাই শুধু মুমিনরাই নয়, মানুষ হিসেবে প্রত্যেকে সে বিধান অনুসরণ করে দুনিয়ার জীবনে যে কেউ এখান থেকে সমৃদ্ধি অর্জনের পথ আবিষ্কার/অনুসন্ধান করতে পারে। দুনিয়া এবং আখেরাতের পাথেয় হিসেবে যদিও এই কুরআন মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক, তথাপিও বলা যায় এখান থেকে অমুসলিমরাও তার স্বাদ গ্রহণ করতে পারে এবং অজ্ঞাতসারে তা করেও থাকে। আল্লাহ প্রদত্ত অগণিত নিয়ামতকে (সংখ্যা নির্ণয় করে শেষ করা যায় না-১৪:৩৪) নিয়ে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময়কর অনুসন্ধান এবং আবিষ্কারসমূহ পর্যালোচনা করলে তার অজস্র প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এই নিয়ামত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন মানুষ জিজ্ঞাসিত হবে।(১০২:৮)। কুরআনে কি আছে আর কি নেই-তা জানার সহজ একটি উপায় হলো বর্ণনাক্রমিক শব্দের সূচিপত্র বা কনকর্ডেন্স-যার অপর নাম অভিধান বা ডিকশনারী। ভাষাকে আয়ত্ব করা বা জ্ঞানচর্চার জন্য আধুনিক যুগে ডিকশনারীর অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই তার অভিধান রচিত হয়েছে। কুরআনের উপরও বর্তমান বাজারে আরবি-বাংলা, ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষাতেও বহু অভিধান প্রত্যক্ষ করা যায়। কিন্তু এই অভিধানটি রচিত হয়েছে একটি ব্যতিক্রমী ধারায়। তা হলো এখানে কুরআনের যাবতীয় শব্দের অর্থ জানার সাথে সাথে মূল শব্দের বিষয়বস্তও খুব সহজে অবগত হওয়া যায়। আল্লাহর সম্মানিত নবী ইয়াকুব (আ.) বাতাসের মাধ্যমে (ইথারে ভেসে আসা তথ্যের মাধ্যমে) হারিয়ে যাওয়া পুত্র সন্তানের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।(আল-কুরআন:১২:৯৪)। এখানে আধুনিক যুগের আবিষ্কার মোবাইল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মানুষের মেধা থেকে আবিষ্কার এই নিয়ামত সম্পর্কে মানুষকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বলে কুরআনে ইঙ্গিত রয়েছে। কুরআনে ২৭ বার (রিহুন-বাতাস) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। একটি স্থানে এই তথ্য থাকলে বাকি ২৬টি স্থানে কি ধরনের তথ্য রয়েছে তা আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় জানার কোন সুযোগ সৃষ্টিকরা যায়নি। এমনকি বাংলা ভাষায় অনূদিত তাফসিরগুলোতেও তার কোন সমন্বয় দেখা যায় না। ফলে বাতাস এবং অন্যান্য শব্দ নিয়ে তথ্যগুলো অসম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করা যায়। বাতাসকে সুলায়মান (আ.)-এর জন্য বশীভূত করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছে- আমি সুলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে যা প্রভাতে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। (৩৪:১২, ৩৪:১২)। হতে পারে সুলায়মান (আ.)-এর সময় বাতাসের উপর ভর দিয়ে মানুষ আধুনিক যুগের বিস্ময়কর আবিষ্কার বিমানের মত কোন যানবাহনে আরোহণ করে চলাচল করত। এই আবিষ্কারে মানুষ অতিমাত্রায় অহংকারী হয়ে উঠে আল্লাহকে অস্বীকার করলে মুয়জিযাস্বরূপ এই বাতাসকে তার অধীন করে দেওয়া হয়। ফলে মানুষের চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। নবী-রাসূলদেরকে প্রদত্ত মুয়জিযার নিকট অহংকারী ফিরাউন, নমরূদ এভাবেই পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়। মুজিযা নিয়ে বিশ্লেষণ করলে (তাফসির) এ ধরনের বহু তথ্য উন্মোচন সহজ হয়ে যায়। আল-হামদুলিল্লাহ। এ ধরনের (রিহুন শব্দের মত) হাজার হাজার তথ্য নিয়ে বাংলা ভাষায় এই প্রথম এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। কুরআনের তথ্যসমূহ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এখানে একটি শব্দের বহু সমার্থক শব্দের প্রয়োগ রয়েছে। যেমন কুরআনে স্ত্রীর মাহর অর্থে ৩টি শব্দের উল্লেখ দেখা যায়। সাদুক্বাতিহুন্না, ফারিদাতুন এবং উজুরিহুন্না। স্ত্রী অর্থে নিসাাউন, ইমরাতুন, আযওয়াাজুন, সাাহিবাতুন শব্দের প্রয়োগ বিদ্যমান এবং তা বহুবার উচ্চারিত। ধ্বংসের ৩২টি (ধ-বর্ণ দ্রষ্টব্য), অহংকারের ৮টি (অ-বর্ণ দ্রষ্টব্য), আশ্রয়ের ১১টি (আ-বর্ণ দ্রষ্টব্য), ভাগ বা অংশের ৬টি (অ-বর্ণ দ্রষ্টব্য), আত্মার ৫টি (আ-বর্ণ দ্রষ্টব্য), আরহাাম অর্থ গর্ভবতী আবার আত্মীয় অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আত্বীয়ের আরও ৩টি শব্দ হলো কুরবা, আনসাব ও ইল্লা। জীন শব্দটি জীন, সাপ এবং পাগল অর্থেও তার প্রয়োগ রয়েছে। আইনুন অর্থ চোখ ছাড়াও ঝরণা ও তত্ত্বাবধানে/সামনে অর্থ পাওয়া যায়। দল শব্দের ১৮টি শব্দ, মেঘের ১২টি শব্দ (আমার প্রণীত সূচিপত্রটি দ্রষ্টব্য) ইত্যাদি শুধু বাংলা অক্ষর ধরে সব গুলোর উল্লেখ একস্থানে পাওয়া যায়। কিন্তু আর কোনো অভিধান গ্রন্থে এই পথ অনুসৃত হয়নি। শব্দসমূহ কুরআনের এক স্থানে উল্লেখ না থাকায়-এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য অবগত হওয়া বেশ কঠিন বলে মনে হয়। কুরআনের তাফসির করার সময় শব্দগুলোর ব্যবহার নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়ার দাবি রাখে। এভাবে বহু শব্দের একাধিক অর্থ এবং ভিন্ন ভিন্ন শব্দের প্রয়োগ নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানকালে যে সমস্ত সাধারণ তাফসিরসহ প্রসিদ্ধ তাফসিরসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, সেখানে এরূপটি প্রকাশ পায় না। কুরআনে ‘ফি কুল্লি শাইয়িন’-সব কিছুই বিদ্যমান আছে বলে বহু তথ্য বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান কালের জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যে বিচরণ রয়েছে, সে সমস্থ বিষয় নিয়ে কুরআন থেকে কি ধরনের তথ্য প্রকাশ পায় তা জানার কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। বিষয়টি পরিষ্কার করে বললে এটা দাঁড়ায় যে, একজন কৃষিবিদের জন্য এখানে কি ধরনের তথ্য রয়েছে তা জানার সুযোগ নেই। এমনিভাবে একজন পদার্থবিজ্ঞানীর জন্য, রসায়নবিদের জন্য, সমুদ্রবিজ্ঞানীর জন্য, অর্থনীতিবিদের জন্য, জ্যোতির্বিদের জন্য, আবহাওয়াবিদের জন্য, ব্যবসায়ীদের জন্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর জন্য- কি তথ্য রয়েছে তা জানার কোন সুযোগ নেই। আল-হামদুলিল্লাহ। আমার প্রণীত সূচিপত্রটির (কনকরডেন্স-বর্ণনাক্রমিক সূচিপত্র) আলোকে প্রকাশিত সুবৃহৎ গ্রন্থ “আল-কুরআন : শব্দ সংখ্যা ও তার অভিধান” থেকে যে কোন গবেষকের জন্য যে কোন ধরনের বহু তথ্য সম্পর্কে খুব সহজে অবগত হওয়া যায়। ১৮৪২ সালে গ্যাস্টোভ ফুলুজেল নামে একজন জার্মানী খ্রিস্টান গবেষক কুরআনের কনকরডেন্স (বর্ণনাক্রমিক সূচিপত্র-নির্ঘণ্ট) নিয়ে প্রথম এই কাজটি শুরু করেন। সেটি তৈরি হয়েছিল আরবি অক্ষরের ক্রমিকধারা নিয়ে এবং তাঁর গ্রন্থটির নাম ছিল ‘নুজুমুল কুরআন ফি আত্বরাফিল কুরআন”। কুরআনে উটের ভিন্ন ভিন্ন যে ১১টি নাম পাওয়া যায়, এই গ্রন্থে ১১টি আরবি অক্ষর ধরে তা অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমার প্রণীত অভিধানটিতে ‘উ’ অক্ষর ধরে সকল নাম উট শব্দের মধ্যেই পাওয়া যায়।*(বিস্তারিত সূচিপত্র দ্রষ্টব্য)। সেখানে (ফুলুজেলের গ্রন্থটি) কুরআনের কিছু শব্দের উৎপত্তিগত দিক নিয়ে (মাসদার-মূল শব্দ) ভুল ধরা পড়ে। সেগুলো (প্রায় ৪০টির মত) সংশোধনপূর্বক আরবি বর্ণনামূলক ধারায় পুনরায় একটি গ্রন্থ লেখা হয় ‘আল-মুয়জামুল মুফাহারাছ লি আল-ফাজিল কুরআন-লেখক ফুয়াদ মুহাম্মাদ আব্দুল বাকী। প্রকাশকাল-২০০৭, দারুল হাদীস-মিশর। এই গ্রন্থে জিনের ৩৯টি শব্দ (জিন-২২/জিন্নাতুন-১০/জাান্না-৭=৩৯) আছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কুরআনের অনুবাদে ৩৯টি স্থানে গেলে প্রমাণ করা যায় যে-প্রকৃতপক্ষে জিন অর্থ বুঝায় এরূপ শব্দ আছে ৩২ বার। ৫টি স্থানে অর্থ প্রকাশ পায় পাগল (জিন্নাতুন) অর্থে। ২টি স্থানে প্রকাশ পায় সাপ অর্থে। আমার প্রণীত অভিধানটিতে ‘স’ তে গেলে সাপ, ‘প’ অক্ষরটিতে গেলে ‘পাগল’ (মজনু/ জিন্নাতুন), জিন অর্থে ‘জ’ অক্ষরে গেলে সবগুলো বিস্তারিত পাওয়া যায়। কুরআনের যে কোন বিষয়বস্তু যেমন-শাজারুন বা গাছ এবং ত্বাইরুন বা পাখি। এদুটি কুরআনে ২৭ বার ও ১৮ বার উল্লেখ আছে। কিন্তু শাজারুন/ত্বাইরুন শব্দযুক্ত মাত্র একটি আয়াত পাঠ করলে গাছ বা পাখি নিয়ে কুরআনের স¤পূর্ণ বক্তব্য কখনোই স্পষ্ট করা যায় না। এমনকি বিশে^ প্রকাশিত তাফসিরসমসূহেও এর কোনো নজির পাওয়া যায় না। বরং ২৭ ও ১৮ বার শাজারুন/ত্বাইরুন শব্দযুক্ত আয়াতের সমষ্টি বাংলা অনুবাদ একস্থানে সংযুক্ত করার প্রয়োজন হয়। এতে গাছ বা পাখি নিয়ে কুরআনের সম্পূর্ণ বক্তব্য পরিষ্কার হয়ে যায়। এই অভিধানে (শব্দকোষ) কুরআনের প্রত্যেকটি শব্দ এবং তার সংখ্যা সমষ্টি নিয়ে বাংলা অনুবাদ একস্থানে উল্লেখিত হয়ে সমগ্র বিষয়/বক্তব্যটি সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে বলে অনুমান করা যায়। (আল্লাহ অধিক জ্ঞাত)। অভিধান নিয়ে শব্দ সংখ্যার উপর আরেকটি বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের নাম ‘আল-মুফরাদাতু ফি গারীবিল কুরআন’ লেখক রাগীব ইস্পাহানী।(মৃত্যু-১১০৮)। কুরআনের অভিধানের উপর প্রকাশিত সর্বশেষ বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ সমূহ নিয়ে পর্যালোচনা করলেও “আল-কুরআন : শব্দ সংখ্যা ও তার অভিধান” গ্রন্থটি যে অধিক সমৃদ্ধ তা প্রমাণ করা খুবই সহজ হবে বলে ধারণা করা যায়।(আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)। আল-কুরআনে কতটি শব্দ আছে তা নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ আছে। আরবি ব্যাকরণগত দিক দিয়ে একটি ক্রিয়া শব্দের ১৪টি রূপ ছাড়াও (বচনসহ ৬টি পুরুষলিঙ্গ, ৬টি স্ত্রীলিঙ্গ, ২টি পুরুষ-স্ত্রী উভয় লিঙ্গ) অন্যান্য রূপও রয়েছে। কিন্তু কুরআনে একটি ক্রিয়া শব্দের ১৪টি রূপই ব্যবহৃত হয়েছে বলে দেখা যায় না। শব্দটির ক্রিয়ারূপসহ বিশেষ্যরূপেও সর্বোচ্চ তার ৮/৯টি রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। কিন্তু বাংলা অনুবাদে তার বিভিন্ন রূপ অর্থ প্রকাশ পায় না। যেমন-আরবিতে ব্যবহৃত একটি ক্রিয়া শব্দ ‘খাসরুন (স-সিন, ক্ষতি করা)। শব্দটির বিভিন্নরূপ খাসারা/ইয়াখসারু/তাখসারু/খাসিরুন ইত্যাদি পরিলক্ষিত হলেও বাংলা অনুবাদে শুধু ক্ষতি অর্থই প্রকাশ পায়। আরবিতে ‘ফাতাহা’ ক্রিয়া অর্থে খোলা বা খুলল (১৪টি রূপে) ব্যবহৃত হয়। এটিই আবার ‘মিফতাহ/মাফাাতিহু’ বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার অর্থ হয় চাবি। কুরআনে এরূপ বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগ আছে। সাধারণত আরবিতে তিনটি অক্ষর যুক্ত করেই মূল শব্দের উৎপত্তি দেখানো হয়। যেমন-দেখানো হয়েছে-ফা-তা-হা/খা- সা-রা-তিনটি অক্ষরযুক্ত একটি শব্দের প্রয়োগ। এমনিভাবে ‘ইলম’ শব্দটি কুরআনে ৭৭৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু তার বিভিন্নরূপ রয়েছে। যেমন-আ’লামু/তা”লামু/ইয়ালামুন/ তায়-লামুন/মুয়াল্লিমুন-ইত্যাদি। কিন্তু আরবি উল্লেখ করার সময় শুধু ইলম (আইন-লাম-মিম) উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বিশেষ্যযুক্ত শব্দেরও একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন ছাড়াও কখনো কখনো শব্দটির ক্রিয়ারূপও লক্ষ করা যায়। যেমন-খালিদিন একটি শব্দ (স্থায়ী/অমর) যা বিশেষ্য এবং ক্রিয়া (আখলাদা (৭:১৭৬) ঝুঁকে পড়া) অর্থে কুরআনে ব্যবহৃত হয়। ত্বাগা (সীমালংঘন করা) কুরআনের একটি শব্দ ৬ বার ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু একটি স্থানে মাউন এর (পানির) সাথে সংযুক্ত হয়ে উচ্ছ্বাস বা জলোচ্ছ্বাস অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে (কুরআন-৬৯:১১)। নার অর্থ আগুন। এটি বিশেষ্য। এর ক্রিয়ারূপ তুরুন-আগুন প্রজ্জ্বলিত করা। (৫৬:৭১)। অলী/আউলিয়া অর্থ বন্ধু (বিশেষ্য)। এর ক্রিয়ারূপ ইয়াতাওল্লা। (বন্ধুরূপে গ্রহণ করা)। (৫:৫৬, ২২:৪, ৭:১৯৬)। আরবিসহ সব ভাষাতেই এরূপ শব্দের বহু প্রয়োগ ও শৈল্পিকতা পরিলক্ষিত হয়। এরূপ বহু শব্দের বহুরূপ ব্যবহার কুরআনে বিদ্যমান। তাছাড়া মূল শব্দের সাথে সংযুক্ত হয়ে (সর্বনাম-অব্যয়রূপে) ব্যবহৃত হয়েছে বা, তা, ওয়াও, ফা, ছাওফা, ওলাকিন্না, ইন্না/ইন্নাা, আন্না, রুবামা, হাাশা, মিন, ইলা, রুওয়াইদা, কানা, আসবাহা, জাল্লা, মান ( কে?) ইত্যাদি (হরফে জাার, আফয়ালে নাক্বিসাসহ ইত্যাদি-ব্যাকরণের দিক দিয়ে যার সংখ্যা ১০০টি-আরবিতে যাকে বলা হয় -মিয়াতে আমেল)। এছাড়া অসংখ্য স্থানে ‘ওয়াও’ আরবিতে একটি অক্ষর হলেও কুরআনে তা ‘শফথ’ ও ‘এবং’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি কি শব্দ ধরা হবে না অক্ষর ধরা হবে তা ঐ সকল পরিসংখ্যানে স্পষ্ট করা হয়নি। তাই তার সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় করা একটি দুরুহ ব্যাপার। এরপরও সংখ্যাবিশারদদের দ্বারা কুরআনে মৌলিক শব্দের সংখ্যা ১৮০০ বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও আমি তার সাথে একমত নই। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)। বাংলা ভাষায় কুরআন নিয়ে সৃজনশীল গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে খুবই কম। ভাই গিরীশচন্দ্র সেনের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ পায় ১৮৮১-১৮৮৬ সালে। কুরআনের একটি অক্ষর পাঠের ব্যাপারেই যখন গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীছ প্রচলিত রয়েছে (প্রতিটি অক্ষর পেেঠ দশ নেকি পাওয়ার ছাওয়াব-যদিও তা দুর্বল সূত্রে বর্ণিত), তখন তার প্রতিটি শব্দ নিয়ে গবেষণা করার বিষয়ে তো কোন প্রশ্ন না তুলাই স্বাভাবিক। তাই আশা করি ভবিষ্যতে কুরআনের উপর এ ধরনের আরো উচ্চতর গবেষণা পরিচালিত হয়ে আধুুিনক জীবন ও জিজ্ঞাসার বিষয়ে তা সর্ব সাধারণের জন্য ইহকাল ও পরকালে মুক্তির পথ ও পাথেয় হয়ে উঠবে-ইনশাআল্লাহ। পরিশেষ একজন মানুষ হিসেবে সীমিত জ্ঞান নিয়ে যে গকেষণা পরিচালনা করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিদগ্ধ পাঠকমহলের দৃষ্টিতে কোন ভুল ধরা পড়লে তা সঙ্গে সঙ্গে লেখককে অবগত করানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো। হে রহমানুর রাহিম! আমার এই গবেষণাকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করে নাও। এই অছিলায় আমার মৃত্যুকে সহজ করে দিও। আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা আমার এই কর্মে সহযোগিতা করেছে তাঁদেরকে এবং এর পাঠককেও ক্ষমা করে দিয়ে মহামুসিবতের দিনে একটু জান্নাতে স্থান করে দিও। (আমিন)। মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম। ৯২১, মণ্ডলগাতী (চাঁচড়া চেক পোষ্ট), যশোর। ১লা জুন-২০২৩। মোবাইল : ০১৭২৫-৫৫৫৯৩৯ ই-মেইল : mrislam939@gmail.com
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
t

এই লেখকের আরো বই