চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

ফাউস্ট

    ফাউস্ট: ফাউস্ট জর্মন সাহিত্যিক গ্যোটে বিরচিত একটি নাটক যা ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য। এটি দুই পর্বে লিখিত। এটি গ্যোথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত সৃষ্টি; একই সঙ্গে এটি জর্মন সাহিত্যেরও সর্বাধিক আলোচিত সাহিত্যকর্ম। ফাউস্ট ১ম খণ্ড ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৮২৮-২৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি পুনর্মার্জ্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ফাউস্ট ২য় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ২য় খণ্ড প্রকাশের আগেই গ্যোথের মৃত্যু হয়। ফাউস্ট রচনার ইতিহাস মধ্যযুগে “ফাউস্ট” চরিত্রটি কিংবদন্তির মর্যাদা পেয়ে গিয়েছিল ইউরোপে বিভিন্ন দেশে। গল্পে-কাহিনীতে“ফাউস্ট” অথবা“ ফস্টাস” নামের একাধিক কল্পিত অথবা লোকগল্পের চরিত্রের দেখা যাওয়া যায়, তবে এদের আদি উৎস বাইবেলে বর্ণিত জাদুকর সাইমন ম্যাগাস। বাইবেলে বর্ণিত সাইমন ম্যাগাস নিষিদ্ধ জ্ঞানের চর্চা করে। সে নানা অপকর্মে শয়তানের সমর্থন লাভ করে। তবে শেষ পর্যন্ত সে খ্রিস্টধর্মে প্রত্যাবর্ন করে এবং ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ করে। তবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়াটা শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে সম্ভব হয় না। আদিতে ফাউস্ট বা ফস্টাস চরিত্রের উত্থান ও পতনের সঙ্গে একদিকে ব্ল্যাক ম্যাজিক, অতিমাত্রার উচ্চাশা এবং ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ধৃষ্টতা ইত্যাদিএবং এসবের অনিবার্য শাস্তি এবং অন্যদিকে গির্জার অনুশাসন, ধর্মীয় নৈতিকতা এবং ব্যক্তির দায়-দায়িত্বেরবিবিধ প্রসঙ্গ জড়িত ছিল। ১৫৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ফাউস্ট জীবনীভিত্তিক সম্ভবত প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি আখ্যান প্রকাশিত হয়, হিস্টোরিয়া ফন, ড. ইউহান ফস্টাসপ্রিচ্ছদনামে। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। পরের বৎসর, ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে, ইংরেজ নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লো তার বিখ্যাত নাটক দি ট্রাজিক্যাল হিস্ট্রি অফ ডক্টর ফস্টাস রচনা ও প্রকাশ করেন। মার্লোর গ্রন্থটিকে ইউরোপীয় রেনেসাঁস চিন্তার, যুক্তিমূলক জ্ঞানসাধনা, আত্মার স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ফস্টাস দীর্ঘদিন ফাউস্ট নামীয় কিংবদন্তির সবচেয়ে শিল্পীত প্রকাশ হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রয়ে যায়। তবে গ্যোতে রচিত “ফাউস্ট” প্রকাশের পর বলা হতে থাকে গ্যেটে ছিলেন ফাউস্ট কিংবদন্তির সফলতম রূপকার। ফাউস্টের মূল কাহিনী এ নাটকের সূত্রপাত স্বর্গে। অনুবাদ অংশে দেখুন ঈশ্বরের সঙ্গে মেফিস্টোফেলিসের কথোপকথন। স্বর্গে ঈশ্বরের সঙ্গে মেফিস্টোর বাজি ধরে। মেফিস্টো বলে, ঈশ্বরের অনুগত পণ্ডিত ফাউস্টকে সে পথভ্রষ্ট করতে পারবে। কাহিনীর ঘটনাচক্রে প্রতীয়মান হয় বাজিতে আপাতদৃষ্টিতে তার জয় হয়েছে। ঈস্টারের রবিবারে ফাউস্ট শহরের তোরণ পেরিয়ে বেড়াতে যায়, সাধারণ মানুষের জীবনের স্পর্শ পায়। এক নেড়ি কুকুরকে দেখে তার অনুকম্পা হয় এবং সে তাকে ঘরে নিয়ে আসে। সেই কুকুরটি আর কেউ না ছদ্মবেশী মেফিস্টোফিলিস। মেফিস্টো স্বরূপ ধরে ফাউস্টকে প্রলোভিত করে, তাকে এক ডাকিনীর কাছে নিয়ে যায়। ডাকিনীর হাতে তৈরি সঞ্জীবনী পানীয় খেয়ে ফাউস্টের বয়স কুড়ি বছর কমে যায়, সে তিরিশ বছরের যুবকে পরিণত হয়। তার শরীরে যৌনকামনা জাগ্রত হয়। মার্গারিটা নামের এক সাধারণ পরিবারের মেয়েকে দেখে ফাউস্ট তার প্রেমে পড়ে। মার্গারিটাকে গ্রেচেন বলেও ডাকা হয়। মেফিস্টোর সহায়তায় তার প্রেম সফল হয় এবং ফাউস্ট গ্রেচেনের সঙ্গে মিলিতও হয়। ফাউস্ট-এর সঙ্গে তার মিলনে যাতে মা বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য গ্রেচেন তার মাকেও হত্যা করে। একসময় গ্রেচেন অন্তঃসত্ত্বা হয়; কালে সন্তানের জন্ম হয়। গ্রেচেন তার সন্তানকে সে পানিতে হত্যা করে। এর আগে গ্রেচেনের ভাই ভ্যালেন্টাইন গ্রেচেনের এহেন দুর্বার স্খলনে কুপিত হয়ে ফাউস্টকে আক্রমণ করে। মেফিস্টোর সহায়তায় ফাউস্ট ভ্যালেন্টাইনকে পরাস্ত করে, শেষাবধি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু হয়। এক সময় গ্রেচেন গ্রেপ্তার হয়, কারাগারে যায়, এবং ফাউস্ট তা জানতে পেরে মেফিস্টোর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও কারাগার থেকে গ্রেচেনকে মুক্ত করতে যায়। কিন্তু গ্রেচেন রাজি হয় না। তার কাছে প্রতীয়মান হয় কারাগার পাপমোচনের সুবর্ণ সুযোগ। গ্রেচেনকে অনমনীয় দেখে মেফিস্টো ফাউস্টের হাত ধরে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসে। মেফিস্টো বলে, ““গ্রেচেন এখন পতিত। তার পরিত্রাণ নেই।”” কিন্তু আকাশ থেকে ভেসে আসে অদৃশ্য কণ্ঠটস্বর: “না গ্রেচেন নির্বাণ পেয়েছে।” ফাউস্ট শেষ পর্যন্ত পলায়ন করে। বাংলায় বিভিন্ন অনুবাদ দেব্রবত রেজ-এর অনুবাদ ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে দেবব্রত রেজ ফাউস্ট-এর প্রথম পর্বের একটি অনুবাদ করেছিলেন, “ফাউস্ট: বিয়োগান্ত নাটকের প্রথম পর্ব (১৭৭৩-১৮০৮)” শিরোনামে। গ্যেটের করা রেছিলেন ফাউস্ট-এর একটি খসড়ার পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ এই প্রথম ভাগ। দেবব্রত রেজ ফাউস্ট বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন মূল জার্মান ভাষা থেকে। এর ফলে তার অনুবাদ মূলানুগত। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুবাদ করলেও তিনি তা জীবদ্দশায় প্রকাশ করেন নি। তার মৃত্যুর পর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার ইউপিএল এই গ্রন্থটি প্রকাশ করে। তার অনুবাদ থেকে কিছু অংশ নিম্নরূপ: প্রভু: ফাউস্টকে চেনো তুমি? মেফিস্টো : ডক্টর ফাউস্টকে? প্রভু: হ্যাঁ আমার সেই ভক্তকে? মেফিস্টো: ভক্ত? বলিহারি ভক্তি! পার্থিব যা কিছু তাতে তৃপ্তি নাই তার, উর্ধ্বে তাড়িত মূর্খ নিজের গাঁজের উচ্ছাসে, আপন মত্ততায় আধাআধি সচেতন। আকাশের কাছে দাবি করে যে তারা সুন্দর, সবচেয়ে দাবি করে পৃথিবীর কাছে যা তার সবচেয়ে তীব্র ভোগ! সমস্ত নিকট আর সমস্ত দূর নিতান্তই অপ্রচুর তার অতৃপ্ত চিরক্ষুব্ধ হৃদয়ের কাছে! প্রভু: বিপর্যস্ত বুদ্ধি দিয়ে সে আমারই সেবা ক’রে চলেছে এখনো পর্যন্ত। তবু, শীগ্গীর, আমি তাকে উত্তীর্ণ ক’রে দেবো পূর্ণ জ্ঞানে। গাছে যখন জাগে নব কিশলয় খালি খোসা জানে তখনই কোনো এক বছরে সেই গাছ ফুলে আর ফলে সুন্দর হয়ে উঠবে। মেফিস্টো: কী পণ রাখবেন যদি ঘটে অন্যরূপ? আমাকে যদি দেন অনুমতি ভুলিয়ে নিয়ে যেতে তাকে আমার পথে, আপনি তা’হলে তাকে নিশ্চয়ই হারাবেন। প্রভু: যতদিন থাকবে সে পৃথিবীতে এ কাজে তোমার ততদিন কোনে মানা নেই: যতক্ষণ চেষ্টা মানুষের ভুল তার ততক্ষণ মেফিস্টো: ধন্যবাদ আপনাকে, আমার আনন্দ নেই মরাদের হারিয়ে দিয়ে। যে গাল রসাল ভরাট তার প্রতি আমার লোভ সবচেয়ে। মরাদের অতিথি হতে আমার রুচিতে বাধে স্বভাবেতে আমি বিড়াল ইঁদুরের কাছে। প্রভু: বেশ তাই হোক, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক! আকর্ষণ ক’রো যদি পারো এই আত্মাটাকে তার আদি উৎস থেকে; যদি তারে নিতে পারো বশ করে নিয়ে যেয়ো তোমার নিজস্ব পথে। শেষে, জানি স্বীকারোক্তির দিনে তুমি নিজেই হবে লজ্জাহত। সৎ যে মানুষ সে তার আবেগের অন্ধতার মাঝেও সত্যপথের দিশাটাকে ভুলেও ভোলে না। আহমদ ছফাকৃত অনুবাদ ফাউস্ট বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন আহমদ ছফা । তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফাউস্টের অনুবাদ শুরু করেন এবং তা ধারাবহিকভাবে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশে সক্ষম হন। আহমদ ছফা লর্ড ম্যাকিন্সের ইংরেজি অনুবাদ থেকে তা বাংলা ভাষায় তর্জমা করেন। এই অনুবাদ সাহিত্যটি বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক পণ্ডিত আব্দুর রাজ্জাকের মতে আহমদ ছফার অনুবাদে গ্যোতে এবং আহমদ ছফা উভয়কেই পাওয়া যায়। আহমদ ছফা ‘ফাউস্টের’ ২য খণ্ডের অনুবাদে আর প্রবৃত্ত হন নি। তিনি বলেছেন, এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার। আহমদ ছফার অনুবাদ কাব্য সুষমামণ্ডিত। নমুনা নিম্নরূপ: খোদা: ফাউস্টকে চেনো তুমি? মেফিস্টো: সেই যে পণ্ডিত! খোদা: অনুগত সেবক আমার। মেফিস্টো: খোদাতালা করো অবধান সে এক আজব লোক অনুগত অতিশয়। ধরণীর বসন্তুপুঞ্জে অরুচি ভীষণ কখনো কখনো তাকে অন্তরের জ¦র আকাশে উড্ডীন করে মুছে যায় তার চোখে সঙ্কীর্ণ সীমানা সংশয় মত্ততা মিশে কাঁপে তার ডানা। সুচিত্রিত ইন্দ্রধনু বর্ণ সুকুমার মস্তকে জড়াতে চায় স্বর্গের চাদর ধরণীর বস্তুরাশি ছুঁয়েছেনে, সে চায় নির্মল আনন্দধারা শিল্পের নির্যাস। নিকটে সুদূরে ভাসে যেইসব দৃশ্যাবলি অতি মনোহর যেইসব শব্দপুঞ্জ প্রীতিপদ মনুষ্য শ্রবণে কিছুতে মজে না মন জেগে থাকে নিশিদিন অন্তরে অসুখী। খোদা: যদিও বন্দনারত সেবক আমার মোহের ছলনা তার অন্তর ধাঁধায়। অতি শীঘ্র সুনির্মল আমার আলোক ইতাশার প্রান্ত থেকে টেনে নেবে তাকে। বীজ বপনের কালে কিষান-হৃদয়ে যে-রকম হরিতাভ আশা জন্ম লয় চেকন সুতার মতো ক্ষীণ বীজাঙ্কুর ফাগুনের ফুলে-ফলে ভরে দেবে ক্ষেত হেমন্তে দোলাবে আ-হা উজ্জ্বল কনকবর্ণ আয়েশি ফসল। মেফিস্টো: বাজি রেখে বলি যদি পক্ষপাতহীন থাকে আপনার প্রখ্যাত করুণা মনোমতো পথে তাকে টেনে নিতে পারি। খোদা: যেমনটি ইচ্ছা তুমি চাতুরীর করো ব্যবহার যতোকাল মনুষ্য নিবাসভূমি থাকবে পৃথিবী স্বতঃসিদ্ধ এ মানুষ চেষ্টার আলোকে নিশ্চিত ঝালিয়ে নেবে নব পরিচয়। তবে, একথাও মিথ্যা নয় মাঝে মাঝে ভুলস্রোতে ভাসাবে সে চেষ্টার সাম্পান। মাঝে মাঝে ভুলস্রোতে ভাসাবে সে চেষ্টার সাম্পান।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে
ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে (জার্মান: Johann Wolfgang von Goethe, উচ্চারণ [ˈjoːhan ˈvɔlfɡaŋ fɔn ˈɡ�ːtə] (এই শব্দ সম্পর্কেশুনুন); ২৮ আগস্ট ১৭৪৯ – ২২ মার্চ ১৮৩২) ছিলেন একজন জার্মান কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কূটনীতিবিদ ও প্রশাসনিক। তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে চারটি উপন্যাস, মহাকাব্য ও গীতিকাব্য, গদ্য ও গদ্যকাব্য, নাটক, স্মৃতিকথা, একটি আত্মজীবনী, সাহিত্যিক ও নন্দনতাত্ত্বিক সমালোচনা এবং উদ্ভিদবিদ্যা, শারীরবিদ্যা ও রং বিষয়ক রচনা। এর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক খণ্ডরচনা, ১০ সহস্রাধিক চিঠি এবং প্রায় ৩ হাজার চিত্রকর্ম। তাঁকে আধুনিক যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান সাহিত্যিক বিবেচনা করা হয়।

জর্জ ইলিয়ট তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন— “জার্মানির শ্রেষ্ঠতম গুণী ব্যক্তি এবং পৃথিবীর সর্বশেষ সত্যিকারের বহুশাস্ত্রজ্ঞ”। গোটে একাধারে কবিতা, নাটক, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, মানবতাবাদ এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। গ্যোটের সেরা সাহিত্যকীর্তি হচ্ছে দু খণ্ডের নাটক ফাউস্ত যাকে বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সেরা রত্ন হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ষোড়শ শতাব্দীর বিখ্যাত জার্মান উপকথা ফাউস্তের উপর ভিত্তি করে এই নাটক লেখা হয়েছিল। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে প্রচুর কবিতা, Wilhelm Meister's Apprenticeship নামক Bildungsroman এবং The Sorrows of Young Werther নামক উপন্যাস। গ্যোটে জার্মান সাহিত্য বিশেষত ১৮ ও ১৯-শতকে বিকশিত ভাইমার ক্লাসিসিজ্‌ম আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। এই আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে ছিল একই সাথে আলোকময়তা, আবেগময়তা (Empfindsamkeit), Sturm und Drang এবং রোমান্টিসিজ্‌ম।

জীবনী
বাবা য়োহান ক্যাস্পার গ্যোতে (১৭১০-১৭৮২) এবং মা এলিজাবেথ ক্যাথারিন (১৭৩১-১৮০৮) পুত্র গ্যোতে ১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ আগস্ট তারিখে ফ্রাঙ্কফোর্টে জন্মগ্রহণ করেন। সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের ফলাফলে ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসীরা ফ্রাঙ্কফোর্ট দখল করে নেয়, [[১৭৬৪[[ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট দ্বিতীয় জোসেফের অভিষেক। ১৭৬৫ থেকে ১৭৬৮ পর্যন্ত গ্যোতে লাইপসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৭৬৮-৭০ দুই বছর ফ্রাঙ্কফোর্টে পিতৃগৃহে অবস্থান, ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে স্ট্রাসবুর্গে অবস্থান, একই বছর আইনের সনদপ্রাপ্তি। ১৭৭১/৭২ খ্রিষ্টাব্দে অল্পদিনের জন্য-আইন ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করেন গ্যোতে। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে ভেৎস্লারে অবস্থান। এ-সময়ে তিনি প্রহসন, কবিতা এবং র ক্লাভিগো রচনা করেন। এ-সময়ে ফাউস্ট, ‘এগমন্ট’ এবং ‘ভের্থর’ রচনা শুরু করেন। এ পর্যায়ে লিলি শোয়েনমানের সঙ্গে তার বিয়ে স্থির হয়। ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেন। একই বছর নভেম্বর মাসে ভাইমারের ডিউক কার্ল আউস্টের নিমন্ত্রণে ভাইমারে গমন করেন। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। এ-সময়ে শার্লোট ফন স্টেইনের সঙ্গে তার প্রণয় হয়। ইল মেনাউতে খনিজসংক্রান্ত বিষয়ে মনোনিবেশ করেন। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে হার্টস্ পর্বতে ভ্রমণ করতে যান। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বার্লিন সফর করেন। ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধপরিষদের সভাপতি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ-সময়ে তিনি গদ্যে ইফিগেনিয়া রচনা করেন।
১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার সুইজারল্যান্ড ভ্রমণে যান। ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সম্মানসূচক সামন্ত পদে উন্নীত করা হয় এবং তিনি অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অস্থিবিদ্যায় যঁসধহ ড়ং রহঃবৎ সধীরষষধৎব অস্থি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন।
১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজন্যবৃন্দের মধ্যে দৌত্যকাজ করেন এবং উদ্ভিদবিদ্যার গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইতালি ভ্রমণ করেন এবং কবিতায় ‘ইফগেনিয়া’, ‘এগমন্ট’ এবং ‘টাসসো’ নাটক রচনা করেন। ১৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে দৈনন্দিন রাজকার্যের ঝামেলা থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন। এ-সময়ে ভাগীপতœী খ্রিস্টিয়ানা ভালফিয়াসের সঙ্গে একত্র বসবাস শুরু করেন। এই সময়ে রচনা করেন কাব্যগ্রন্থ ‘রোমান এলিজি’। ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে একমাত্র পুত্র আউগস্-এর জন্ম হয়। গ্যোতের মোট পাঁচ সন্তার জন্ম হয়েছিল। পাঁচ সন্তানের মধ্যে একমাত্র আউগস্টই বেঁচে ছিলো। ১৭৯০ আট খণ্ডে গ্যোতে রচনাবলি প্রকাশিত হয়। এ-সময়ে তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, অস্থিবিদ্যা, আলোকবিদ্যা ও উদ্ভিদের রূপান্তর বিদ্যার (গবঃধসড়ৎঢ়যড়ংরং ড়ভ ঢ়ষধহঃ) গবেষণায় গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করেন। এ ছাড়া রাজকীয় নাট্যমঞ্চ পরিচালকের দায়িত্বভারও তাকে গ্রহণ করতে হয়। ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফরাসিদের অভিযান। এ-সময়ে সাত খণ্ডে তার নতুন রচনাবলি প্রকাশ শুরু হয়।
১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির অপর একজন বিখ্যাত কবি শিলারের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব হয়। গোটা-বিশে^র সাহিত্যে এরকম বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত বিরল। এ-সময়ে তিনি ‘ভিলহেম মাস্টার্স অ্যাপ্রেন্টিসশিপ’ গ্রন্থ রচনায় হাত দেন। ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শিলারের সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘স্কেনিয়েন’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ-সময়ে ‘হারমান অ্যান্ড ভরোথিয়া’ নাটকটি রচনা করেন। ১৭৯৭- তিনি দক্ষিণ জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেন। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য সাময়িকী ‘ডি প্রোপিলায়েন’ প্রকাশ করেন। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে বিসর্প বা শোথ রোগে আক্রান্ত হন। ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘দি ন্যাচারাল ডটার’ প্রকাশ। জেনাতে ফ্রোমান পরিবারে অতিথি। ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে মাদাম দা স্টেইল না�œী ফরাসি মহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ। ভিঙ্ক্যাালমানের সাথে সাক্ষাৎ। নেপোলিয়ন নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন। ১৮০৫ ভয়ঙ্কর কিডনি রোগে আক্রান্ত। শিলারের মৃত্যু। সেলটারের সঙ্গে বন্ধুত্ব। ১৮০৬ অক্টোবরের ১৪ তারিখে শুরু হয় জেনার যুদ্ধ। ভাইমার নেপোলিয়নের দখলে চলে যায় এবং গ্যোতে ভালপিয়াসকে [[খ্রিস্ট ধর্ম মতে বিবাহ করেন। ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘ফাউস্ট’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে ১২ খণ্ড প্রকাশিত গ্যোতে রচনা সংকলেন ফাউস্ট প্রথম খণ্ডের অন্তর্ভুক্তি। এই একই বছরে এরফুর্ট কংগ্রেসে নেপোলিয়নের সাথে গ্যোতের সাক্ষাৎ। ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে আত্মজীবনী রচনার সূচনা। ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে অমর সংগীতশিল্পী বেঠোফেন এবং অস্ট্রিয়ার সম্রাজ্ঞী মারিয়া লুডো-ভিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ। নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান। ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে রুশিয়া, প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়ার সম্মিলিতভাবে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ১৮ অক্টোবর তারিখে লাইপসিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ। ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়ানের পরাজয়, এল্বা দ্বীপে নির্বাসন এবং ভিয়েনা কংগ্রেসের অধিবেশন।
১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে মাইন, রাইন অঞ্চলে ভ্রমণ। পুনরায় কোল্ন্ হয়ে রাইন, মাইন অঞ্চল পরিদর্শন। ২৯ খণ্ডে তার রচনাবলির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ। একই বছরে ওয়াটার্লুর যুদ্ধে নেপালিয়নের চূড়ান্ত পরাজয় এবং সেন্ট হেলেনায় নির্বাসন। ১৮১৬-এ পতœী ভালফিয়াসের মৃত্যু।
১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজকীয় নাট্যমঞ্চের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। পুত্র আউগস্টের সঙ্গে ওতিলে পগভিশের বিয়ে। ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘দিওয়ান অব দা ওয়েস্ট অ্যান্ড ইস্ট’ (প্রাচ্য-প্রতীচ্যের দেওয়ান) গ্রন্থের প্রকাশ। বার্লিনে ফাউস্টের প্রথম মঞ্চায়ন। ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে ‘ভিলহেম মার্স্টাস্ অ্যাপ্রেন্টিস্শিপ’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের প্রকাশ।
১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে শুরুতেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। এ-সময়ে একারমান তার সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করতে ভাইমারে আসেন। ১৮২ ৫খ্রিষ্টাব্দে ফাউস্ট দ্বিতীয় খণ্ড লেকারকাজে প্রবৃত্ত হন গ্যোতে। কাজ শুরু। ১৮২৮ ৪০ খণ্ডে রচনাবলি শেষবারের মতো তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে গ্যোতের একমাত্র পুত্র আউগস্ট রোমে মারা যান। প্যারি আ্যাকাডেমিতে কুভিয়ের-জিওফ্রে বিতর্কের সূত্রপাত। প্যারিতে জুলাই বিপ্লব। নাগরিক সম্রাট লুই ফিলিপের রাজত্বকাল শুরু। ১৮৩১-এ তিনি উইল করেন।
ফাউস্টের দ্বিতীয় খণ্ডের সমাপ্তির পর ইলমেনাউতে শেষবারের মতো জন্মদিন পালন করেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চের ১৪ তারিখ তিনি গাড়িতে ভ্রমনে বের হন। যান। মার্চের ১৬ তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মার্চের ২২ তারিখে মারা যান। সেটা ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ। ২৬ মার্চ তারিখে রাজকীয় শবাধারে করে তাকে প্রিয় কবিবন্ধু শিলারের পাশে সমাহিত করা হয়।

এই লেখকের আরো বই