চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

সেই সময়(অখন্ড)

    সেই সময় একটি বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাস যার উপজীব্য ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনামলের বিকাশমান কলকাতা নগরীর সমাজ এবং মানুষ। বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এ উপন্যাসের রচয়িতা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালির নবজাগরণ উপন্যাসটির অন্যতম মূল বিষয়বস্তু। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব চন্দ্র সেন, ডেভিড হেয়ার এবং জন বেথুন এর মতো প্রখ্যাত চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ। প্রথমে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি। পরবর্তীতে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স ১৯৮১ সালে দুই খন্ডে পুস্তক আকারে উপন্যাসটি প্রকাশ করে। একই প্রকাশনী থেকে উপন্যাসের অখণ্ড সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। ১৯৮৩ সালে উপন্যাসটি বঙ্কিম পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়। ‘সেই সময়’ এবং সুনীলের অন্য দুটি উপন্যাস ‘পূর্ব-পশ্চিম’ ও ‘প্রথম আলো’ মিলিয়ে একটি ত্রিপর্বীয় ঐতিহাসিক কালপঞ্জী। বিবরণ “সেই সময়” একটি জনপ্রিয় গবেষণাধর্মী উপন্যাস। এর কালপর্ব ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ অবধি বিস্তৃত। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জমিদারপুত্র নবীনকুমার। তার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এই উপন্যাসের পরিধি। নবীনকুমার চরিত্রটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচনা করেছিলেন ঐতিহাসিক চরিত্র কালীপ্রসন্ন সিংহের অবলম্বনে। নবীনকুমার চরিত্রটি সম্পর্কে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “আমার কাহিনীর পটভূমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ। এবং এই কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়। … সময়কে রক্ত-মাংসে জীবিত করতে হলে অন্তত একটি প্রতীক চরিত্র গ্রহণ করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক। তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার বৈপরীত্য, শেষ দিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে মাতৃরূপ দর্শন এবং অদ্ভুত ধরণের মৃত্যু, সবই যে সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা, আশা করি তা আর বিশদভাবে এখানে বলবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় কথা শুধু এই যে, নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল-মৃত অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল আছে। অন্য কোনো প্রসিদ্ধ পুরুষের নাম বা জীবনকাহিনী আমি বদল করিনি…।” শিশুটির জন্ম মাত্র সাত মাস দশ দিন গর্ভবাসের পর; মাতৃজঠরেই তার চাঞ্চল্য প্রকাশ পেয়েছিল। সেই অন্ধকার জলধিতে সে বেশিদিন থাকতে চায়নি। — ক্ষণজন্মা নবীনকুমারের আগমন বার্তা দিয়ে শুরু হয়েছে “সেই সময়” মধ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা এই উপন্যাসের পটভূমিকা। সেই সময়ের সামাজিক সমস্যা, বাবু সংস্কৃতি, বাল্যবিবাহ ও বিধবাদের করুণ অবস্থাসহ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বিস্তারের ফলে কতিপয় ব্যক্তির সমাজ সংস্কারমূলক প্রবণতা— সবই উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। চরিত্র পরিকল্পনা ও ঘটনা বিন্যাসে সাহিত্যিক তথ্য ও কালানুক্রমিক ভারসাম্য রেখেছেন। উপন্যাসের একটি চরিত্র প্রবীণ বিধুশেখরের চোখ দিয়ে লেখক সমকালীন সমাজের ভ্রষ্ট্রতার চিত্রায়ন করেছেন এই বলে, “সারা দেশেই যুবক দলের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের অনাচার দেখা দিয়েছে। অতি অল্প বয়সেই তারা সুরাপান ধরেছে এবং ধরা মানে কী, সে যেন চূড়ান্তভাবেই আকড়ে ধরা। আগে যেমন গুরুজনের সামনে যেটুকু চক্ষুলজ্জা ছিল এখন তারও বালাই নেই। শহর ছেয়ে গেছে বারঙ্গনায়।” তৎকালীন বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি, ধর্ম ও ব্যভিচার ইত্যাদি সকল আঙ্গিক এ উপন্যাসের অবয়বে স্থান লাভ করেছে। ঈশ্বরচন্দ্রের বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্রাহ্মধর্ম চর্চা, মঙ্গলপান্ডের ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন, মধুসূদন ও দীনবন্ধু মিত্রের উত্তেজিত সাহিত্য চর্চা, ম্যাক্সমুলারের ভারত চর্চা, কালীপ্রসন্ন সিংহের নাট্য চর্চা ও হুতোম প্যাঁচার নকশা প্রকাশ ইত্যাদি নানা উপাদান একটি পরিব্যাপ্ত রচনাপটে যথাযথ ধারাবাহিকতায় সমন্বিত হয়েছে। উদীয়মান আলোকিত সমাজের বিপরীতে বাবু বিলাস, অবৈধ সন্তান প্রসব, বেশ্যাগমন, মদ্য পান ইত্যকার বিষয়াদি। তাই একই সঙ্গে ‘সেই সময়’ উত্তরণ ও পতনের গল্প। এর ঐতিহাসকিতা লেখকের মুন্সীয়ানায় সাহিত্য হয়ে উঠেছে। ভারতে তখন ব্রিটিশদের রাজত্ব। বেনিয়া ব্রিটিশদের কাহিনীও উঠে এসেছে অবধারিতভাবে। লেখকের ভাষ্যে পাঠক পড়বেন, ‘‘লুন্ঠণপর্বের গোড়ার দিকে ইংরেজ কোম্পানি কাতারে কাতারে জাহাজে এ দেশ থেকে মালপত্র বয়ে নিয়ে যেত নিজের দেশে। ফেরার সময় তার অধিকাংশ জাহাজ খালি আসতো। ও-রকম খালি জাহাজ নিয়ে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া বিপজ্জনক, ঝড়ের সময় সেগুলো খেলনার মতন পলকা হয়ে যায়, উল্টে যায় হঠাৎ। তাই সাহেবেরা সেই জাহাজগুলি সবচেয়ে সস্তা জিনিস, নূন দিয়ে ভর্তি করে আনতে শুরু করে। প্রথমে সেই নূন এমনি ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু অচিরেই বণিক জাতির চৈতন্যোদয় হলো। ফেলে দেবার দরকার কী, এই নূনও বিক্রি করা যায়। সাত সমুদ্র তের নদীর পাড় থেকে নূন আমদানী করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না যদিও বিলিতি নূন ও ভারতীয় নূন একই রকম নোনতা, তবু এ-দেশের ডামাডোলের মধ্যে ইংরেজ নানা কৌশলে সেই নূন বিক্রি করা শুরু করলো। দিশী বাজারে নূন চালাবার জন্য সাহায্য নিল কিছু কিছু দিশী লোকের।’’
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।

এই লেখকের আরো বই