চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

ছবির দেশে কবিতার দেশে (প্রবন্ধ)

    নাম না বলে দিলেও বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয় যে, এ-ভ্ৰমণকাহিনী ফরাসীদেশকে কেন্দ্র করে। কে যেন একবার বলেছিলেন, প্রত্যেক শিল্পীরই দুটি মাতৃভূমি। একটি, যেখানে যে জন্মেছে; অন্যটি হল, ফ্রান্স। শিল্পী বলতে এখানে শুধুই চিত্রকরদের কথা বলা হয়নি, কবিরাও নিশ্চিত এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, এই ফরাসিদেশেই যেমন ছিলেন দেগা, মোনে, মানে, রেনোয়া, গগ্যাঁ, মাতিস, রুয়ো কি পিকাসোর মতন মহান শিল্পীরা। তেমনি এই দেশ র্যাবো, ভের্লেন, বদলেয়ার, মালার্মে ভালেরি, অ্যাপোলিনিয়ার আর আঁরি মিসোর মতন কবিদেরও। ফরাসীদেশই তাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার আত্মার বর্ণনায় এসে যেতে বাধ্য, ছবির দেশ ও কবিতার দেশ। কবি ও শিল্পীদের এই অমরাবতীতে একবার নয়, বারবার গিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার পাঁচবারের ভ্ৰমণ-অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এই বই। সাধারণ ভ্ৰমণকাহিনীর থেকে এ-রচনার স্বাদ একেবারে আলাদা। নিছক ঘোরাফেরা আর দেখাশোনার মামুলী বৃত্তান্ত নয় এই বই। পুরো ফরাসীদেশটাকেই যেন খুঁড়ে-খুঁড়ে দেখা। তার শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ঐতিহ্যের মধ্যে বিচরণ। শুধু এই শতকেই নয়, গত শতকেও। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন চিত্রশিল্পী ও কবিরা পারস্পরিক ঘনিষ্টতার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানান সৃষ্টিশীল আন্দোলনে। স্বাভাবিকভাবেই এ-ভ্রমণকাহিনীতে এসে পড়েছে মার্গারিট নামে সেই ফরাসী বান্ধবীটির কথাও, প্রথমবার আমেরিকা-প্রবাসকালে যার সাহচর্য ফরাসীদেশকে গভীরভাবে জানতে সাহায্য করেছিল। মার্গারিটকে নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাস লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কিন্তু এই প্রথম মার্গারিটের সঙ্গে তাঁর গভীর অন্তরঙ্গতার আনুপূর্ব কাহিনী অকপটে বর্ণনা করলেন তিনি। এই ভ্ৰমণকাহিনীতে তাই টুকরো আত্মজীবনীরও স্বাদ। আর মাগারেটের সূত্রেই এই ভ্ৰমণকাহিনীতে এসেছে আমেরিকার বিটবংশ ও গ্রিনিচ গ্রামের কবিদের সঙ্গে তুমুল আড়ার স্মৃতি। এ-গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে রয়েছে বিখ্যাত একেকজন ফরাসী কবির কবিতা থেকে উদ্ধৃতি। এই অনুবাদের কাজে গদ্যলেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সহযোগী হয়েছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।

এই লেখকের আরো বই