চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

সেই সময় (অখণ্ড)

    ফ্ল্যাপে লিখা কথা: এই সেই সময় যখন কলকাতার বাবুসমাজ সূরা, নারী ও বুলবুলি-বিলাসে মগ্ন, যখন নব্যশিক্ষিত যুবকেরা প্ৰাণপণে ইংরেজ-অনুকরণে মত্ত, গ্রাম নিঃস্ব করে প্রজাশোষণের অর্থে চলেছে সংস্কৃতিচার্চা, সমাজ ও ধর্ম সংস্কার, তরুণ বিদ্যাসাগর রাত্রি জেগে রেড়ির তেলের আলোয় রচনা করছেন বাংলা গদ্যভাষা, জেগে উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, এই সেই সময়- হ্যাঁ, একটি বিশেষ সময়ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সুকীর্তিত উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র। তিনি নিজেও এ-উপন্যাস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন- “আমার কাহিনীর পটভূমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্ৰীষ্টাব্দ। এবং এই কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়।” লিখেছেন, “সময়কে রক্ত-মাংসে জীবিত করতে হলে অন্তত একটি প্রতীক চরিত্র গ্রহণ করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক। তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার বৈপরীত্য, শেষ দিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে মাতৃরূপ দৰ্শন এবং অদ্ভুত ধরনের মৃত্যু, সবই যে সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা, আশা করি তা আর বিশদভাবে এখানে বলবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় কথা শুধু এই যে, নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল-মৃত্যু অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল আছে। অন্য কোনো প্ৰসিদ্ধ পুরুষের নাম বা জীবনকাহিনী আমি বদল করিনি...”। সত্যিই তাই। নাটকের শুরুতে যেমন দেওয়া থাকে পাত্ৰপাত্রীর নাম ও পরিচয়, তেমনভাবে এই বিপুল বর্ণাঢ্য উপন্যাসেরও গোড়াতেই যদি দেওয়া থাকত বিস্ময়কর মনে হত সেই তালিকা৷ মাইকেল, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, হেয়ার সাহেব, দেবেন ঠাকুর-কে নেই। সমগ্র উনবিংশ শতাব্দীই যেন নানান চরিত্র হয়ে চোখের সামনে জীবন্ত। যেটুকু তফাৎ তা হল, গবেষকের রচনায় প্ৰাণ থাকে না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেই প্ৰাণটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এক দুরন্ত সময়ের জীবন্ত চলচ্চিত্র ‘সেই সময়’। বঙ্কিম ও আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত এই গ্রন্থের দুটি খণ্ডকে এক মলাটের মধ্যে এনে সম্পূর্ণ নতুন আকারে প্রকাশিত হল এই রাজসংস্করণ। এ-গ্রন্থের বিপুল সমাদর ও স্থায়ী কীর্তিমূল্যের কথা মনে রেখে এ-এক আনন্দ-শ্রদ্ধাঞ্জলি।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।

এই লেখকের আরো বই