চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (হার্ডকভার)

বীরযোদ্ধা সুবেদার রাজ্জাক আগরতলা মামলার চৌদ্দ নম্বর আসামী

    আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার স্মরণীয় ব্যক্তিত্ত্ব, স্বাধীনতা যুদ্ধের সাহসী বীর সুবেদার আবদুর রাজ্জাক ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার ১৪নং অভিযুক্ত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করার জন্য গোপন বিপ্লবী তৎপরতায় জড়িতদের মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত জ্যেষ্ঠ সদস্য সুবেদার (অব.) আব্দুর রাজ্জাক (১৪ নং আসামি) ছিলেন মুক্তিকামী সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। জন্মপরিচয়: বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার আব্দুর রাজ্জাক ১৯১৭ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব (উত্তর) থানার চরকাশিম গ্রামে (মামলায় বরোষার চর লেখা হয়েছে) জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি যশোর জেলার সদর থানার চাঁন্দুটিয়া গ্রামে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। বাবা সিতু সরকার ছিলেন কৃষিজীবী। কর্মজীবন: ১৯৪১ সালে এন্ট্রান্স (ম্যাট্রিক) পাস করার পর ১৯৪১ সালে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ শহরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালের ১৪ই জানুয়ারি চতুর্থ ডিভিশনের ৭ আইবিটিতে (ইনফেনট্রি ব্রিগেড ট্রান্সপোর্ট) তিনি নিয়োগ পান। তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি বোম্বাই/মুম্বায়ে দায়িত্ত্ব পালন করেন। এরপর ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা শুরু হলে তাঁর ডিভিশনকে পাঞ্জাবের জলন্ধরে মোতায়েন করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারত ভাগের সময় তিনি অপশন নিয়ে পাকিস্তানের লাহোরে যান এবং ৬৪১ নম্বর ডেপুটি কোম্পানিতে যোগদান করেন। ভারত ভাগের পরে আব্দুর রাজ্জাক অনুধাবন করলেন বিট্রিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের যে চোখে দেখা হত তাঁর চেয়ে অবমাননাকর চোখে দেখে বাঙালিদের পাকিস্তানিরা। ১৯৪৮ সালে ১০ নম্বর ডিভিশনের ৬১২ নম্বর ডেপুটি কোম্পানি ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্ট আত্নপ্রকাশ করলে তাদের পাঠানো হয় ঢাকায়। ১৯৬৫ সালে তিনি সুবেদার হিসেবে প্রমোশন পান এবং জয়দেবপুরে পোষ্টিং গ্রহণ করেন। অতপর ৫ম বেঙ্গলের সদস্য হয়ে যান রংপুরে। ১৯৬৯ সালে তিনি বাধ্যতামুলক অবসর গ্রহণ করেন। বিপ্লবী সংগঠক: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে প্রায় ২২ বছর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন এবং পশ্চিমা সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা বিভিন্ন সময় নানারকম অবিচার ও অবমাননাকর ব্যবহারের শিকার হন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানেদের বিতাড়নের বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়ে সংগঠনে সমমনা সদস্য বাড়ানো তথা সাংগঠনিক তৎপরতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়। বিপ্লবী তৎপরতায় অংশগ্রহণ: আবদুর রাজ্জাক পাকিস্তান আমলে তাঁর চাকরি জীবনের ২২ বছরের মধ্যে (৪৭-৬৯) [স্বাধীনতার সশস্ত্র প্রস্তুতি: আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দি ৭১] প্রায় দশ বছর কাটিয়েছেন পশ্চিম পাকিস্তানে। ষাটের দশকের শুরুর দিকে তিনি জানতে পারেন পাকিস্তানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনাদের সহায়তায় বিপ্লবের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের ক্ষমতা থেকে তাড়ানোর জন্য বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত বাঙালি নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, সাধারণ সৈনিক এবং বেসামরিক প্রশাসনের কিছু লোক যে পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে সংগঠিত হতে থাকেন তাতে সুবেদার রাজ্জাকও যুক্ত হন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত থাকাকালে সুবেদার আবদুর রাজ্জাক কয়েকটি হোটেলসহ অজ্ঞাত স্থানে বিপ্লবী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত বেশ কিছু বৈঠকে যোগ দেন। এক পর্যায়ে পূর্ব বাংলায় বদলি হয়ে এসে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর সেনানিবাসে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি সংশ্লিøষ্ট এলাকায় তাঁর বাসা এবং ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বাসাসহ বিভিন্ন গোপন স্থানে বেশ কয়েকটি সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং যখন যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে বিপ্লব সফল করার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এর মধ্যে বঙ্গবদ্ধু এবং বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের উপস্থিতিতে কয়েকটি বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায় । যেমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার কথা তিনি প্রায়ই উল্লেখ করে বলতেন-‘একদিন বঙ্গবন্ধুর বাসায় এক বৈঠকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী উপস্থিত ছিলেন। পাকিন্তানদের জুলুম অত্যাচার থেকে বাঙালি জাতিকে বাঁচানোর উপায় এবং সশস্ত্র সংগ্রামের পথ নিয়ে নানা আলোচনার সময় উপস্থিত অনেকের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হবার উপক্রম হয়। এ সময় বেগম ফজিলতুননেছা মুজিব দরজায় এসে উচ্চকণ্ঠে বলেন, সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন সভা মূলতবী হবে না। সবাই বসুন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর উঠবেন। সুবেদার রাজ্জাক তাঁর কর্মস্থলের থাকার সময় কৌশলে বুঝিয়ে বেশ কিছু সমমনা লোককে বিপ্লবি দলের সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু ৬৭ সালের দিকে দলের কোনো একজন সদস্যের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সমস্ত পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। রাজ্জাক ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর প্রথম দিকে রংপুর সেনানিবাস থেকে ছুটি নিয়ে যশোরের নিজ বাড়িতে (ষাটের দশক থেকে পরিবার নিয়ে যশোরের স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন) অবস্থান করছিলেন। ছুটিতে আসার সাত দিন পর যশোর সেনানিবাস থেকে একজন সেনাসদস্য এসে তাঁকে (রাজ্জাককে) জরুরিভিত্তিতে ঢাকা সেনানিবাসে তলব করা হয়েছে বলে খবর দেন। কিন্তু ঢাকা সেনানিবাসে যাওয়ার পরই সেখানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়: বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ত্বে ছয় দফা নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হলে ছয় দফাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পিছনে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘটনা পাকিস্তানি শাসকগোষ্টীকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এসব আন্দোলনের মাঝে পাকিস্তানি সরকার দায়ের করে আগরতলা মামলা। এই মামলায় প্রধান আসামী শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ১৪ নম্বর আসামী করে গ্রেফতার করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে। চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। তাকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনি তার অন্য ৩৪ জন অভিযুক্তের মতই ছিলেন দৃঢ় এবং অবিচল। পরে ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের সময় অন্য অভিযুক্তগণের সঙ্গে তিনিও মুক্তি পান। আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত থাকাকালীন তার উপর অমানুষিক অত্যাচার, সুঁচগুলো ঢুকে যেত নখের ভেতর ঢাকা ও রাওয়াল পিণ্ডি সেনানিবাসে ১১ মাস ধরে চলে তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন। তাঁর মুখ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয় তিনিও তাঁদের সাথে জড়িত। সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সুবেদার আব্দুর রাজ্জাককে রাজসাক্ষী হবার আহবান জানানো হয়। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন। জীবদ্দশায় তাঁর কাছ থেকে জানা যায় পশ্চিমা সেনাকর্মকর্তাদের তাঁর উপর নির্যাতনের ভয়ঙ্কর চিত্র। গ্রেপ্তারের পর থেকেই কথিত ষড়যন্ত্রের তথ্য প্রকাশ করার জন্য তাঁর ওপর নানান রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করা হয়। ওরা জানায়, (পাকিস্তান কর্মকর্তারা) শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলে নির্যাতন থেকে নিঙ্কৃতি দেওয়া হবে। তা ছাড়া সাক্ষী দেওয়ার বিনিময় পদোন্নতি ও জমি দেওয়াসহ দেশের বাহিরে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়ার নানান রকম প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু তিনি (রাজ্জাক) প্রতিবারই নির্যাতনের সময় বলতেন ‘দেশ, জাতির ও শেখ মুজিবের সঙ্গে বেইমানি করতে পারবো না। ফলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি তাঁর ওপর অসহ্য নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, তাঁকে প্রথমে বরফের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখা হতো। তখন একজন চিকিৎসক দাঁড়ানো থাকতেন। চিকিৎসক যখন বলতেন যে, এখনই বরফ থেকে বের না করলে উনি মারা যাবে, তখন বরফ থেকে বের করে গরম পানি ভর্তি ব্যাগ দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা হতো। জিজ্ঞাসাবাদের সময় হাতের কবজি ও হাঁটুতে লোহার রড দিয়ে প্রহার করা হতো নির্দয়ভাবে। রাতে দুহাত দুদিকে বেধে দাড় করিয়ে রাখা হতো এবং হাতের প্রতিটি আঙ্গুলের মাথায় একটি করে বৈদ্যুতিক সুইচ লাগানো থাকত। ঘুম এলে হাতের সামান্যে নড়াচড়ায় সূচগুলো ঢুকে যেত নখের ভেতর। এ সময় জোরে কান্না এলে তিন জন পাকসেনা কর্মকর্তা এসে বলতেন বল, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবি কিনা। তিনি বলতেন ফাঁসির দড়িতে ঝুললেও সাক্ষী দেব না। তাঁকে সব সময় অন্ধকার ঘরে রাখা হতো। কারও সাথে দেখা করতে দেওয়া হতো না। তিনি যখন ঢাকা সেনানিবাসের বন্দি হন তখন তাঁর কোনো খোজ না পেয়ে স্ত্রী পরিজন দিশেহারা হয়ে পড়েন। তার ছোট ভাই প্রয়াত আব্দুস সাত্তার সরকার তাকে খুজতে রংপুর সেনানিবাসে গেলে সেখান থেকে কেউ তাকে এ বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হয়নি। কেউ মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত দেখাননি। অনেক চেষ্টার পর একজন বাঙালি সেনা সদস্য অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে জানান, সুবেদার রাজ্জাক কুর্মিটোলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি। কিন্তু একথা আমি আপনাকে বলেছি জানলে আমার চাকরি থাকবে না। এছাড়া আমিও জেলে যাবো। আগরতলা মামলার বিচারকাজ শুরু হবার পর থেকে অভিযুক্তদের তাঁদের পরিবারের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়। বন্দি অবস্থায় অভিযুক্তদের পাশাপাশি কক্ষে রাখা হতো। মামলা প্রত্যাহার, বাধ্যতামূলক অবসর: ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই মামলা প্রত্যাহার করা হয়। আগরতলা মামলা শেষ হলে সুবেদার আব্দুর রাজ্জাককে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে রাজ্জাক: ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ যখন যশোর সেনানিবাসে নিরস্ত্র বাঙালি সেনা সদস্যদের উপর পাকসেনারা আক্রমণ করে তখন তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে বন্দুক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে রওনা করেন। পথিমধ্যে ফরিদপুর গ্রামের অধিবাসীরা তার গতি রোধ করেন এবং তাকে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে যান। সুবেদার আব্দুর রাজ্জাক মার্চ মাসে বয়রাতে বি.এস.এফ ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার কে. পি সিং এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। বয়রাতে সাব সেক্টরের সদর দফতর প্রতিষ্ঠিত হলে সুবেদার রাজ্জাক সাব সেক্টর কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার দেওয়া দায়িত্ত্ব পালন করেন। ৮নং সেক্টরের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ’৭১ এর অক্টোবর মাসে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রশাসক হিসেবে মুজিবনগর যান (সেনা দফতর)। তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি শার্শার পুটখালী, ঝিকরগাছা ও চৌগাছাসহ কয়েকটি এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি এসময় অসংগঠিত মুক্তিকামী বাঙালিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ৬ ফুটের কাছাকাছি। তিনি অনর্গল ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দিতে কথা বলতে পারতেন, যার জন্য ’৭১ এর এপ্রিলে চৌগাছা থানার কাবিলপুর গ্রামে স্বাধীনতার জন্য গঠিত সংগ্রাম কমিটি তাঁকে অবাঙালি বলে ভুল করেছিল। পরে অবশ্য সঠিক পরিচয় উদ্ধার করা হয়। দেশপ্রেমিক: স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তিনি নিজের জন্য কিছুই চাননি। দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তিই ছিল তাঁর নিকট বড়প্রাপ্তি। এছাড়া পরবর্তী সময়ে তার জীবদ্দশায় নিজ স্বার্থের জন্য তিনি কিছুই করে যাননি। সকল সময়ে দেশের মঙ্গল কামনা এবং স্বাধীন দেশে বাস করার আত্মতৃপ্তি নিয়ে থাকতেন। খেলোয়াড়: তিনি সৈনিক থাকাকালে একজন ভাল খেলোয়াড় এবং মুষ্টিযোদ্ধাও ছিলেন। তিনি অল ইন্ডিয়া আর্মিটিমের মূল দলের ফুটবলার, সেনাবাহিনীর হেভিওয়েট মুষ্টিযোদ্ধা এবং একজন ভাল হকি খেলোয়ার ছিলেন। যৌবনে তিনি সেনাবাহিনীর ফুটবল টিম ও বক্সিংয়ে খুব নাম করেছিলেন। অবসরকালীন সময়ে: চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পরে তিনি চান্দুটিয়াতে ফিরে যান। ৭১ পরবর্তীতে ঢাকা সিএমএইচ পুনর্গঠনের সময় তিনি তিনি একবছর দায়িত্ত্ব পালন করেন। অবসরকালীন সময়ে তিনি ঢাকাতে সিএসডি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। এসময় তাঁর স্ত্রী দীর্ঘ ২৩ বছর প্যারালাইসিসে অক্রান্ত অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করেন। পারিবারিক জীবন: তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগম। পাঁচ কন্যা ও এক পুত্রের জনক। তাঁর একমাত্র পুত্র এস.এম তরিকুল ইসলাম উপসচবি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি গাজীপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেষজীবন: সুবেদার (অব.) আবদুর রাজ্জাক ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট নিজ গ্রামে মারা যান। পরের দিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে যশোর কারবালা কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
Cash On Delivery
7 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
ইজাজ আহমেদ মিলন:
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক ইজাজ আহমেদ মিলন ১৯৮৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা, সাহিত্য, গবেষণা, বই লেখা কিংবা সাংবাদিকতায় সর্বত্রই তার সুনাম। এমনকি প্রচারবিমুখ সমাজ সেবায়ও রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। 

তিনি সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘১৯৭১ : বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং’ বইটিতে প্রায় ৩ বছর অনুসন্ধানের পর উঠে এসেছে ১৯৭১ সালের ১৪ মে দুপুরে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া হিন্দু অধ্যুষিত গাজীপুরের বাড়িয়া। তিন দিক থেকে বেলাই বিলে ঘেরা বাড়িয়ায় নির্বিচারে চালানো হয় গণহত্যা। বিল সাঁতরে কিংবা নৌকায় চড়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন শত শত নারী-পুরুষ আর শিশু। পাকিস্তানী নরপশুদের হত্যা শিকারের উল্লাসের নিচে শহীদ হন অন্তত ২শ মানুষ। এদের কারও ঠাঁই হয়নি স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে।

সেইসব শহীদের নামে তালিকা ধরে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক ইজাজ আহমেদ লিখেছেন ‘১৯৭১ : বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং’ গ্রন্থটি। পোড়ামাটির ক্যানভাসে বিরামহীন বেদনা, স্মৃতির আখরে লেখা, নষ্ট শরীর ভিজেনা রৌদ্রোজ্জ্বলে গ্রন্থসহ তার লেখা প্রায় ১টি বই এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ -বীরযোদ্ধা সুবেদার রাজ্জাক আগরতলা মামলার চৌদ্দ নম্বর আসামী ।  

ইজাজ আহমেদ মিলন বর্তমানে জাতীয় একটি দৈনিকের গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য দুইবার পেয়েছেন বজলুর রহমান স্মৃতি পদক। কাব্যগ্রন্থের জন্য লাভ করেছেন ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’ ও আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘বেদনা আমার জন্ম সহোদর’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দাগ সাহিত্য পুরস্কার। আমি তার হাত ধরেই এসেছিলাম সাংবাদিকতায়। এই প্রিয় মানুষটির জন্মদিনে জানাচ্ছি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। 

ইজাজ আহমেদ মিলন বর্তমানে জাতীয় একটি দৈনিকের গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য দুইবার পেয়েছেন বজলুর রহমান স্মৃতি পদক। কাব্যগ্রন্থের জন্য লাভ করেছেন ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’ ও আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘বেদনা আমার জন্ম সহোদর’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দাগ সাহিত্য পুরস্কার।  

এই লেখকের আরো বই